হৃদয়ে শামসুজ্জোহা স্যার :এ্যাড.শামসুল হক টুকু এমপি
এ্যাড.শামসুল হক টুকু এমপি
স্বরাস্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্হায়ী কমিটির সভাপতি,বীর-মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এ্যাড.শামসুল হক টুকু এমপি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন্নাহ হলে থাকি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্ত হল সাঁতার প্রতিযোগিতা হচ্ছে আমি তখন সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলাম। নিজের প্রতি একটা বিশ্বাস ছিল কারণ আমি জানতাম আমি ইন্টার স্কুলl সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি।আমি ইন্টার জেলা সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি। আমি প্রোভিনসিয়াল সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি।
আমি যখন সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করলাম, তখন আমি ভয়ে ভয়ে সাঁতার দিচ্ছিলাম আর মনে মনে আল্লাহর নাম নিচ্ছিলাম। সাঁতার শেষে যিনি আমাকে ধরলেন তিনি ধবধবে সাদা গেঞ্জি পরা আর সাদা প্যান্ট পরা একজন যুবক। আমি প্রথম স্থান অধিকার করলাম।
সেই যুবক আমার ভেজা শরীরটাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আমাকে খুব আদর করতে লাগলো। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম তিনি একজন ছাত্র। কিন্তু পরে আমার ভুল ভাঙলো, আমি তার পরিচয় পেলাম তিনি আমাদের একজন শিক্ষক রসায়ন বিভাগের তার নাম -শামসুজ্জোহা।
তিনি পরবর্তী সময়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে পাক হানাদার বাহিনীর দ্বারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে নির্মমভাবে নিহত হন। যা অগ্নি ফুল অঙ্গের মতো সারা বাংলাদেশ ফুঁসে উঠেছিল তার হত্যার প্রতিবাদে ছাত্র-শিক্ষকের মিছিলে মিছিলে সারাবাংলা প্রকম্পিত হয়েছিল। এবং তারই ফলশ্রুতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তানের শাসক আইয়ুব খান।
১৮ই ফেব্রুয়ারিতে শামসুজ্জোহা স্যার নিহত হন।তার ঠিক একদিন আগে ১৭ ই ফেব্রুয়ারিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে মিছিল করে আমরা শহরের দিকে যাচ্ছিলাম।
তখনকার (এন এস এফ) এর পৃষ্ঠপোষক আইয়ুব খানের দালাল, মোনায়েম খানের দালাল রাজশাহী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ তার বাড়ির কাছে দিয়ে যখন মিছিল যাচ্ছিল। তখন বিক্ষিপ্ত ছাত্র-জনতা তার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।কারণ সে আইয়ুব খানের মোনায়েম খানের এক নাম্বার দালাল ছিল ।আর এ জন্য ছাত্র জনতা তার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল।
সেখানে গিয়ে আমি পুলিশের হাতে আহত এবং গ্রেফতার হই।আমার সাথে আরো ছাত্রলীগের ছাত্র ইউনয়নের নেতা-কর্মীরা সহ মোট ১১ জন আহত অবস্থায় গ্রেফতার হই।তখন পুলিশ দ্বারা গ্রেফতারকৃত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজে আমাদের চিকিৎসা চলছিল।
সন্ধ্যার সময় জোহা স্যার রাজশাহী মেডিকেল কলেজে আমাদের দেখতে আসলেন।রাজশাহী শহরে তখন আন্দোলন চলছে, কার্ফিউ চলছে ,গুলি চলছে ছাত্র নিহত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ কারফিউ ভঙ্গ করে ঘরের বাইরে আসছে।
শামসুজ্জোহা স্যার হাসপাতলে আসলেন আমাকে দেখেই সঙ্গে সঙ্গে তার বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
শামসুজ্জোহা স্যার আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, তোমাকে তো বলেছিলাম তুমি একজন ভালো সাঁতারু ,তুমি সাঁতারু হও। তুমি দেশের মান ইজ্জত বৃদ্ধি কর ।তুমি তো তা শুনলে না। তুমি রাজনীতি করা শুরু করলে। আবার শ্লোগানও দাও! তোমার ঠিকই হয়েছে।
যদিও পরবর্তী পর্যায়ে তিনি আমাকে বলেছেন, না, না ,না তোমরা তো ত্যাগী ছেলে যা করেছো ভালো করেছো। দেশের জন্য করেছো। তোমরা থাকো আমি সকাল বেলায় তোমাদের জন্য পথ্য নিয়ে আসব ,তোমাদের হল থেকে তোমাদের কাপড়-চোপড় সংগ্রহ করে তোমাদের আবার দেখতে আসবো।
আমাদের সঙ্গে যারা আহত হয়েছিলেন তাদের সবার সঙ্গে তিনি দেখা করলেন এবং কথাবাত্রা বললেন এবং এরপর তিনি চলে গেলেন।
তখন রাত সাড়ে নটা বাজে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে শামসুজ্জোহা স্যারের জন্য সবাই তখন অপেক্ষমান।
এখন যে ঘটনাটি বলব তা আমার নিজের প্রত্যক্ষ করা নয়,সেটা পরবর্তীতে আমি সবার কাছে শুনেছি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ডঃ শামসুজ্জোহার স্যার তিনি বলেছিলেন, আগামীকাল যদি কোনো পুলিশ গুলি করে ইপিআর গুলি করে মোনায়েম খানের পক্ষে যদি একটাও গুলি হয় ।তাহলে সেগুলি আমার কোন ছাত্রের গায়ে লাগার পূর্বে আমার গায়ে লাগবে।কারন আমার এই জামাতে আমার সন্তানদের রক্ত জড়িয়ে আছে।
সকাল বেলা তিনি যখন আহত ছাত্রের কাপড়-চোপড় সংগ্রহ করে নাস্তার টেবিলে বসেছেন।তার স্ত্রী তখন নাস্তা দেবার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। ঠিক তখনই তার কাছে খবর আসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে পুলিশের সাথে ইপিআর এর সাথে পাকিস্তানি প্রশাসনের সাথে ছাত্রদের মুখোমুখি হয়ে গেছে।তিনি নাস্তার টেবিলে নাস্তা না করেই সোজা বের হয়ে গেলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের দিকে।
তার দায়িত্ব ছিল কারন তখন শামসুজ্জোহা স্যার ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে পৌছানোর পর। পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বললেন স্টপ,স্টপ পুলিশ তার কথা মানলেন না।
একটা গুলি এসে তার বুকে লাগে তিনি পুলিশের গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন।এরপর তাকে ব্যানেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেছিলেন ঘাতকের দল।
সেদিন সেখানে আহত হয়েছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডক্টর সালাউদ্দিন ডঃ মাজহারুল ইসলাম এবং ডঃ আব্দুল খালেক এবং রাজ্জাক সাহেব সহ অনেকে।
আর সে দিন থেকেই আন্দলনের মোর ভিন্ন দিকে চলে গেল তখন ছাত্র জনতার একটিই দাবী জেলের তালা ভাঙ্গো বঙ্গবন্ধুকে আনো। বঙ্গবন্ধুকে জেলের তালা ভেঙে আমরা এনেছিলাম।আমরা তখনই বুঝতে পেরেছিলাম পাকিস্তান আর টিকবে না। বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই হবে।
লেখকঃস্বরাস্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্হায়ী কমিটির সভাপতি, সাবেক বিদ্যুৎ,জ্বালানী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, বীর-মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এ্যাড.শামসুল হক টুকু এমপি।
- শিশুকবি আল তোহা নয়ন এর দুইটি কবিতা
- এ্যাড.শামসুল হক টুকু`র
"আত্নকথন" পর্ব:০২ - বিলকিস আরা ক্ষমা`র কবিতা-
‘স্মৃতির অতলে’ - এ্যাড.শামসুল হক টুকু`র
"আত্নকথন" পর্ব:০১ - মাসুম বাদল এর কবিতা-
`ওগো বৃষ্টি দেখা মেয়ে` - আকাশে পাখিরা ধর্মঘট করতে চাইলে আমরা বাধা দেবার কে?
- মোতালেব শাহ আইয়ুব এর ছোট গল্প- `ক্যাটবেরী চকোলেটের টিন`
- অমিতাভ দাশ এর কবিতা
`অভিমান` - বিনু মাহবুবা`র কবিতা - `সে এক তীক্ষ্ণ তোলপাড় !`
- হৃদয়ে শামসুজ্জোহা স্যার :এ্যাড.শামসুল হক টুকু এমপি
- রেজওয়ান তানিম এর কবিতা-
`প্যারিস থেকে নিখিলেশ` - শর্মিষ্ঠা ঘোষ এর অনুগল্প- `টিকটিকি`
- বিনু মাহবুবা`র গল্প- `একজন সম্পুর্ণ মানুষের গল্প`
- বিনু মাহবুবা`র গল্প-
`জীবন` - আজ কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী