একজন অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া আর একটি প্রশ্ন
মুক্তআলো২৪.কম
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল):
সম্ভবত ১৯৯৩ সালের কথা। শীতের কোন একটি বিকেল, বছরের এমনি সময়টাতেই হবে বোধ করি। সারা দেশে তখন নির্বাচনী আমেজ। নির্বাচনী আমেজ ময়মনসিংহেও। ময়মনসিংহ পৌরসভায় নৌকার প্রার্থী সেবার ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান স্যার। পরবর্তীতে তিনি সরকারের ধর্ম মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। স্যার সুখে-দুখে সব সময় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের পাশে থাকতেন। কাজেই স্যারের নির্বাচনে আমরাও স্যারের সাথে সেটাই স্বাভাবিক।
পাশাপাশি আমরাতো পৌরসভার ভোটারও বটে। সেই বিকেলে স্যারের সাথে নির্বাচনী প্রচারে আমরা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। শীতের বিকেল, এমনিতেই সন্ধ্যা তাড়াতাড়ি হয়, মফস্বলে হয় আরো তাড়াতাড়ি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রবেশদ্বার থেকে একটু এগুলে হাতের বায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজ। ঠিক হলো আসরের নামাজের পর আমরা ক্যাম্পাসে ডোর-টু-ডোর প্রচারণা চালাবো। নামাজের সময়টুকু গেস্ট হাউজেই অপেক্ষা করা হবে। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ অবশ্য একদমই পরিকল্পনামাফিক ঘটেনি। গেস্ট হাউজে বসেই আমরা আকাশে কালো ধোয়া দেখছি। ছাত্রদলের ক্যাডাররা এরই মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কার্যালয়টিতে অগ্নিসংযোগ করেছে। ছাত্রলীগের ছাত্ররা এসে জানাচ্ছে ভাংচুর শুরু হয়ে গেছে হোস্টেলে তাদের রুমগুলোতে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের মিছিল তখন অনেকটাই কৃষকায়। ক্যাম্পাসে ঢোকার সময় মিছিলের যে জৌলুস তা আর তখন নেই। সেই জৌলুসহীন মিছিলটি নিয়েই আমরা এগুলাম। খুব বেশি হলে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারটি পর্যন্ত বোধহয় যেতে পেরেছিলাম, চারপাশ থেকে বৃষ্টির মত গুলি করতে করতে হামলা চালালো ছাত্রদলের ক্যাডাররা। সেই মিছিলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের আমরা ছিলাম দুজন, আমি আর ‘আরেকজন’। কিভাবে সেদিন প্রাণটা হাতে নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম জানি না। তবে এখনও মাঝে মাঝেই সেই ভীতিকর অভিজ্ঞতার কথা মনে করে ঘামতে ঘামতে গভীর রাতে ধরফড়িয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠি।
জীবনে আমার বেশ কয়েকবারই যমদূতের সাথে প্রায় সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছে। এই যেমন কদিন আগেও কোভিডে আক্রান্ত হয়ে। তবে এসব সাক্ষাতের বেশির ভাগ অভিজ্ঞতাই আমার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের দিনগুলোতে। কারণটাও সহজবোধ্য। আমার জীবনের যে ময়মনসিংহ অধ্যায়টা, তার বেশির ভাগটাই কেটেছে নব্বই পরবর্তী ক্ষমতাসীন একটি উন্মত্ত সরকারের সময়কালে। তবে এও সত্যি যে সেদিন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যমদূতকে যতটা কাছ থেকে দেখেছিলাম, তার আগে পরে আর কোনবারই এত কাছ থেকে তাকে দেখার সুযোগ আমার হয়নি।
আমি যেবার মমেকসু সাহিত্য-সাংস্কৃতিক উৎসবের আহ্বায়ক, সেটি পণ্ড করেছিল ছাত্রদল উৎসবটির ব্যাকড্রপে তাদের দলীয় নেত্রীর ব্যাঙ্গাত্মক ছবি ছাপানোর হাস্যকর অজুহাতে। আমাদের ক’জনের করা সাম্প্রদায়িকতা আর স্বৈরাচার বিরোধী দেয়ালিকা ‘আসে ছাগল যায়’ প্রকাশ নিয়ে যেবার ক্যাম্পাসে ছাত্রদল তাণ্ডব চালালো কিংবা মমেকসু কার্যালয়ে দৈনিক ভোরের কাগজ রাখার অপরাধে যখন আবারো উত্তপ্ত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস- না সেসব কোনবারই না। এমনকি ফরেনসিক মেডিসিন ভাইভা পরীক্ষার হলে ছাত্রলীগের সে সময়কার সহ-সাধারণ সম্পাদক নোমান ভাই কে খুন করে, ছুড়ি উচিয়ে, জিন্দাবাদ স্লোগান মুখে ১৯৮৮-র ৫ অক্টোবর সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের যে মিছিল, তার সামনে পরেও না।
একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে এই প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমার সাথে একেক জন ছিলেন, কিন্তু প্রতিবারই আমি ছিলাম একজনের সাথে, এমনকি এই কদিন আগে করোনা আক্রান্ত হয়েও। কারণটাও সহজ- এই একজনের হাত ধরেই আমার বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে হাতেখড়ি। এই ‘একজন’, সেদিন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সাথের সেই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ‘আরেকজন’ - শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সদ্য বিদায়ী পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া।
ইদানিং উত্তমদা প্রশাসনিক কিছু অস্বস্তিতে আছেন। মানুষ চেনা কঠিন, সত্যি। তারপরও আমার ধারণা আমি আর দশজনের চেয়ে মানুষ কম চিনি না। আর সেই চেনা যদি হয় এক বা দুই না, ১৯৮৮ থেকে তিন দশকেরও বেশি সময়ের আর তাও যদি হয় এত সব কঠিন অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ, সেক্ষেত্রে মানুষ চেনায় আমার ভুল হওয়ার সম্ভবনা নাই বলেই আমার কাছে মনে হয়। আমার তাই দৃঢ় বিশ্বাস প্রশাসনিক আর আইনের সব নিয়ম-কানুন মেনেই উত্তমদা সামনেই তার এই অস্বস্তিকর দশা কাটিয়ে উঠবেন। তবে সেসব নিয়ে লেখা যেমন আমার উদ্দেশ্য নয়, তেমনি সেই কোন জমানার ছাত্রজীবনের রাজনৈতিক বয়ানও আমার লক্ষ্য নয়। ইদানীং উত্তমদার যে অস্বস্তিকর দশা, তা নিয়ে মিডিয়ায় প্রচার দেখছি। দোষী সাব্যস্ত হবার আগে কাউকে এভাবে মিডিয়া ট্রায়াল করাটা কি এতটুকুও যৌক্তিক? শুধু এই প্রশ্নটা রাখার জন্যই এতগুলো কথা লেখা।
লেখকঃ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)
চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
মুক্তআলো২৪.কম
- এম আর ফারজানা`র কবিতা-
`জ্যোৎস্নারাতে মৃত্যুর অপেক্ষা` - স্বাস্থ্যসেবা এবং উপেক্ষিত ফার্মাসিস্টদের অবদান:সাদেকুর রহমান
- কলাম-
`কেবল ব্যক্তিস্বার্থই ধ্বংস করছে একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলকে` - `বৃটেনের কার্ডিফে ওয়েলস আওয়ামীলীগের উদ্যোগে শোক দিবস পালিত`
- কয়েছ আহমদ বকুল এর কলাম-
`শামীম আইভী বিতন্ডা আমাদের মিডিয়া ও অসহায় আইন` - এ.কে. দুলাল এর কবিতা-
`বায়বীয় প্রেম` - আমি সব ভুলে যাই, তাও ভুলি না ছাত্রলীগের বোল!
- এলিজা আজাদ এর কবিতা-
`আমার জীবন কাহিনী কি করে শোনাবো তোমায়` - কবি,লেখক ও সাংবাদিকঃআব্দুস সাত্তার এর-
কিছু কথা না বললেই নয়...(১০) - একজন অধ্যাপক উত্তম কুমার বড়ুয়া আর একটি প্রশ্ন
- কয়েছ আহমদ বকুল এর কলাম-
সম্প্রচার নীতিমালঃ আদৌ কি প্রয়োজন ছিলো! - পল্লব মাহমুদ এর কলাম-
`শুনেই মনে হতে পারে এ আবার নতুন কী ?` - ফেরদৌস হাসান খান এর কবিতা-
`শব্দের বৃষ্টি` - দোলন মাহমুদ এর কবিতা-
`অগূঢ়ে আক্ষেপ` - কয়েছ আহমদ বকুল এর কলাম-
`অরণ্যে রোদন অথবা সমকালীন বিলাপ`