ঢাকা, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ || ১৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
Breaking:
বাংলাদেশে নতুন গ্যাস অনুসন্ধানে বিনিয়োগ পরিকল্পনা শেভরনের      প্রধান উপদেষ্টা কাল সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন     
Mukto Alo24 :: মুক্ত আলোর পথে সত্যের সন্ধানে
সর্বশেষ:
  সীমান্তে যে কোনো ধরনের অপতৎপরতা রোধে বিজিবি প্রস্তুত : বিজিবি সদর দপ্তর        আঞ্চলিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান তারেক রহমানের        ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে স্থিতিশীল গঠনমূলক সম্পর্ক চায় : ভার্মা     
১৪১০

কোভিডের কোলাজ:অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

অধ্যাপক ডা.মামুন আল মাহতাব(স্বপ্নীল)

প্রকাশিত: ৫ জুলাই ২০২১  

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)


অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল):

শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন। শেষমেষ কি দাঁড়াবে জানিনা, তবে এ কয়দিন বাসা থেকে আমার কর্মস্থল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আর ল্যাাবএইড স্পেশালাইজ হাসপাতালে যাওয়ার-আসার পথে যানবাহন আর পথচারী দেখি হাতে গোনা কয়জনা। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর ঢাকা যেন ভুতুরে শহর। পুলিশের চেকপোস্ট চোখে পড়েছে কয়েকটা তেজগাঁয়ে পুরাতন বিমানবন্দর, রাসেল স্কয়ার আর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের মোড়ে।

মাঝে-সাঝে বিজিবি আর সেনা টহলও চোখে পড়েছে। আমাকে অফিস যাওয়ার পথে থামতেও হয়েছে একবার একটা চেক পোস্টে। তবে পরিচয় পেয়ে সসন্মানে যেতে দিয়েছেন দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য। যদিও এখন পর্যন্ত কোভিড নিয়ন্ত্রণে আসার কোন লক্ষণই নেই, তার পরও ধারণা করছি সকালটা যদি অনাগত দিনের প্রতিচ্ছবি হয় তাহলে এবারের কঠোর লকডাউনটা সম্ভবত কার্যকর হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছে লকডাউন বাড়বে আরো এক দফা। নিঃসন্দেহে তার প্রয়োজনও আছে।

দুই.

এ দফায় লকডাউনটা অবশ্য শুরু হওয়ার কথা ছিল আরো কটা দিন আগে। তবে এবারও শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তিনটা দিন পিছানো হয়েছে লকডাউনটা। কারণটা অবশ্য যৌক্তিক। অর্থ বছরের শেষে এসে সহসা লকডাউন নানা রকম উটকো ঝামেলার সৃষ্টি করতো বলাই বাহুল্য। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বিষয়টি যেহেতু নির্ধারিত হয়েই আছে, কাজেই এবারের অর্থ বছরও যে জুনের ৩০শে শেষ হবে তাতো জানাই ছিল। কাজেই লকডাউনটা যে জুলাইয়ের প্রথম কর্মদিবস থেকে শুরু হবে তা শুরুতেই বলে দেয়া যেতে পারতো। প্রথমে সোম আর পরে বৃহস্পতিবারে লকডাউনের পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত আসায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা কমেন্ট খুব চাউর হয়েছে - ‘চাঁদ দেখা যায়নি, পবিত্র লকডাউন বৃহস্পতিবার থেকে’।

তিন.

আমার এক পরিচিত ভদ্রলোকের সম্প্রতি করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। ভালই আছেন, রোগের লক্ষণ নেই বললেই চলে। বাসায় বসেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত করোনার রোগীর খোঁজ খবর নেয়াটা নিউ নরমাল শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে। খবরটা পেয়ে ফোন করেছিলাম ভদ্রলোকের ভালো মন্দ খবর নিতে। ভালই আছেন। জানালেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইভিনিং ওয়াকে বের হয়েছেন। অন্য সবার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে হাঁটছেন ইদানিং।

চার.

এই সেদিনের কথা। গভীর রাতে চেম্বার যখন গোটানোর পালা, এসে হাজির এক রোগী। সাত মাস আগে তার ফলোআপে আসার কথা ছিল। লিভারে সামান্যই সমস্যা, কাজেই প্যান্ডেমিক বিবেচনায় ফলোআপে বিলম্বে আসাটা সমস্যা নয়, সমস্যাটা অন্যখানে। মাত্রই তার কোভিড রিপোর্টটা পজিটিভ এসেছে। তাই দ্রুত তিনি লিভারের দু’চারটে পরীক্ষা করে সেই কোন সন্ধ্যা থেকে চেম্বারে এসে অপেক্ষা করছেন আমাকে দেখাবেন বলে। সময় নিয়ে দেখাবেন বলে অপেক্ষায় ছিলেন শেষ রোগীটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত। আমার চেম্বার সহকারী তাকে বিনয়ের সাথে পরামর্শ দিল একটি কোভিড হাসপাতালে যোগাযোগের জন্য। পরামর্শটি যে তার একেবারেই পছন্দ হলো না সেটি সিসিটিভিতে তার অভিব্যক্তি দেখেই বুঝলাম। সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার চেম্বারের ওয়েটিং এরিয়ায় তখনও যে দু’চারজন রোগী বসে আছেন, তারা সুপারিশ করছেন ভদ্রলোককে দেখে দেয়ার জন্য। হাজার হোক ভদ্রলোক করোনা নিয়ে সেই কোন সন্ধ্যা থেকে আমার অল্প একটু সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করছেন বলে কথা।

পাঁচ.

লকডাউনের আগের দিন গিয়েছিলাম পুরান ঢাকায় মিটফোর্ড হাসপাতালে। সেখানকার লিভার বিভাগে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হলো ইআরসিপি পরিষেবার। লিভার বিশেষজ্ঞদের জাতীয় সংগঠনটির মহাসচিব হিসেবে দাওয়াত ছিল অনুষ্ঠানে দু’চারটি কথা বলার। সুযোগ হাতছাড়া করার প্রশ্নই ওঠেনা। একেতো আমি মোটেও ‘অ-মাইক’ নই, তার উপর বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞদের জন্য এটি একটি ল্যান্ডমার্ক ঘটনাও বটে। ফেরার পথে নয়া বাজারে প্রচন্ড জ্যামে ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’ দশা। কথায় আছে, অলস মস্তিষ্ক ‘ক্রিয়েটিভিটির’ আখড়া। অলস জ্যামে বসে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলাম, ‘লকডডাউন ইন লকডাউন’।

ছয়.

বাংলাদেশের পরম সৌভাগ্য আমরা অসাধারণ একজন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছি যিনি দেশটাকে নিজের সংসারের চেয়ে আর দেশের মানুষগুলোকে নিজ পরিবারের চেয়ে বেশি আপন করে নিয়েছেন। দফায় দফায় তিনি ঝুঁকি নিয়েছেন বাঙালি আর বাংলাদেশের জন্য। অসংখ্যবার চেষ্টা হয়েছে তার প্রাণনাশের। এসব কোন কিছুর পরোয়া তিনি কখনই করেননি। করছেন না এই অতিমারিকালেও। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাতিকে কোভিড বিরোধী লড়াইয়ে। গর্বিত কণ্ঠে জাতিয় সংসদে ঘোষণা করেছেন দেশের প্রতিটি নাগরিককে তিনি বিনামূল্যে কোভিড ভ্যাকসিন প্রদান করবেন।

সাত.

বাংলাদেশে সম্ভবত দশ শতাংশ মানুষ কর প্রদান করেন। ভারতে এটি বিশ শতাংশের কোটায় আর নেপালে সম্ভবত ত্রিশ ছুঁই ছুঁই। মাঝে মাঝে ভাবি, যদি এদেশের মানুষ ভারত বা নেপালের মত কর দিত তাহলে এই মহিয়সী নারীর নেতৃত্বে দেশটা আজ কোথায় গিয়ে ঠেকতো। স্রষ্টা বোধ করি যা কিছু ভালো তার সবটা এক পাত্রে রাখেন না।

লেখকঃ অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

-চেয়ারম্যান, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

-সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ

 

 

 

 

মুক্তআলো২৪.কম

 

 

আরও পড়ুন
পাঠক কলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত