ঢাকা, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ || ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
Breaking:
সশস্ত্র বাহিনী দিবস: শিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা     
Mukto Alo24 :: মুক্ত আলোর পথে সত্যের সন্ধানে
সর্বশেষ:
  বাংলাদেশ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায় : প্রধান উপদেষ্টা        জঞ্জাল পরিষ্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিন : মির্জা ফখরুল        শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশে সহায়ক শিক্ষাব্যবস্থা দরকার : ড. মুহাম্মদ ইউনূস     
৩৬৮৭

বারবার শপ

কবি কাজী জহিরুল ইসলাম এর একটি কবিতা

কবি কাজী জহিরুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

কবি কাজী জহিরুল ইসলাম

কবি কাজী জহিরুল ইসলাম


রোজ সন্ধ্যায় আমার ঘরে ঢুকেই
লুসি চোখ কপালে তুলবে
দক্ষ অভিনেত্রীর মতো কোমরে হাত রেখে বলবে,
স্যার, ক্যান আই টেল ইউ সামথিং?
আমি বলি, আর দুদিন সময় দাও,
এই উইক-এন্ডেই ছেঁটে ফেলবো, আগের সপ্তাহে খুব ব্যস্ত ছিলাম।

আমার সহকর্মীদের মধ্যে একদল বলে,বড় চুলেই আপনাকে মানায় ভালো
আরেকদল কৌতুক মেশানো কন্ঠে বলে,
মোটেই না, অমন বুড়ো সেজে থাকার শখ আর দেখিনি কারো
আমার স্ত্রী সাধারণত তেমন কিছুই বলে না
তবে মাঝে মাঝে ক্ষেপে গেলে এই
আর্য রমনীর মুখের স্প্রিঙ্কলার খুলে যায়
তখন গলগল করে বেরিয়ে আসে বিচিত্র শব্দ;
প্যাঁচা, ভূত, জংলি, বুড়ো কতো কি-ই না বলে সে।

 আজ রোববার,সকাল সকালই বেরিয়ে পড়ি।
সেই ২০১৪ সালের কথা,জ্যামাইকায় আসার পর থেকে
একটি বাঙালি সেলুনেই চুল কাটাতে যাই।
কি দিনে কি রাতে, কি উইক-ডেতে কি উইক-এন্ডে
যে নাপিত লোকটির বাড়ি চট্টগ্রাম, গ্রামে দালান তুলেছে, যার মুখ থেকে
ভুরভুর করে জর্দার সুঘ্রাণের সাথে কর্ণফুলির জলের মতো আপন
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক শব্দ বের হয়,
সে পান খাওয়া দাঁত দেখিয়ে
হাসিতে একটি উজ্জ্বল ভোর ফুটিয়ে বলে,
দাদা আসেন জে...

আজই প্রথম, কাচের দরোজা বন্ধ; ওপাশে কেউ নেই
নানান রকম চিরুণীগুচ্ছ, রেজর, ট্রিমার, হেয়ার ড্রাইয়ার, শ্যাম্পু,
কলপের শিশি, পাউডারের কৌটা, সবাই যেন দীর্ঘ বিশ্রামের

               প্রস্তুতি নিয়ে গা এলিয়ে পড়ে আছে।

 আমি কি তখনো জর্দার সুঘ্রাণ পাচ্ছিলাম না?

 এবং আমার খুব মন খারাপ এজন্য নয় যে
চট্টগ্রামের হিন্দু নাপিতটি আমার চুল কাটবে না
বরং আমার ধারণা এ অঞ্চলে আর কোনো নাপিতের দোকান নেই
এবং আজ আমার চুল কাটা হবে না
এই কথা ভেবেই আমার মন খারাপ হয়।
আবার সেই লুসি, লুলু, জেসিকাদের কৌতুকদৃষ্টি
তখন হঠাৎ একটি শক্ত অজুহাত পেয়ে যাই
নভো, হ্যাঁ,  ছোটো মেয়ে নভো একদমই আমার ছাঁটা

            চুলের নতুন লুক মেনে নিতে পারে না।
আমি ইউরেকা বলে রাস্তায় নেমে এলেও
জ্যাসিকাদের রক্তচক্ষুরা আমাকে স্বস্তি দেয় না।

আমি বরং দেয়ালঘড়ির ঝুলন্ত পেন্ডুলামের মতো দুলতে দুলতে
খুঁজতে থাকি নতুন কোনো বারবার শপ
ওমা, হিলসাইডের ওপারেই তো একটি, আগে কখনো চোখে পড়েনি তো!
এবং চুল কেটে ফেরার পথে যখন প্রিমিয়ামে
মিষ্টি কিনতে যাচ্ছিলাম আরো দুটো বারবার শপের
সাইনবোর্ড চোখে পড়ে, এবং এ-দুটো বেশ অভিজাত বলেই
মনে হচ্ছে; এতোদিন ওরা কোথায় ছিল?

 এই হিলসাইডে প্রতি উইক-এন্ডেই ঘোরাঘুরি করি,
আর কখনো তো বারবার শপগুলো চোখে পড়েনি!

 হলিসউড, নিউ ইয়র্ক। ২ ফেব্রুয়ারি ২০২০।
মুক্তআলো২৪.কম

মুক্তডানা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত