ঢাকা, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫ || ১৭ মাঘ ১৪৩১
Breaking:
যুক্তরাষ্ট্রে বিমান দুর্ঘটনা, ব্যাপক হতাহতের আশঙ্কা     
Mukto Alo24 :: মুক্ত আলোর পথে সত্যের সন্ধানে
সর্বশেষ:
  ৭ কলেজের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হতে পারে ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’        নতুন কর্মসূচি দিলেন চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা        মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশ চলছে না: দুদু     
৬৫৫

ট্রেন বন্ধের পেছনে দুই মন্ত্রণালয়ের ‘ঠেলাঠেলি’

মুক্তআলো২৪.কম

প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫  

ট্রেন বন্ধের পেছনে দুই মন্ত্রণালয়ের ‘ঠেলাঠেলি’

ট্রেন বন্ধের পেছনে দুই মন্ত্রণালয়ের ‘ঠেলাঠেলি’


রেলপথ মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণায়লের ঠেলাঠেলিতে ট্রেনের রানিং স্টাফদের দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অনড় কর্মীরা কর্মবিরতি থেকেও সরছেন না। দফায় দফায় রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা, রেলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা, মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বৈঠক হলেও সুরাহা হচ্ছে না। 

যেহেতু রেলকর্মীদের দাবির পেছনে বেতন-ভাতা-পেনশন জড়িত তাই রেল মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্তের দায় ঠেলে দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দিকে।
আর অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিষ্কার জবাব, রেলকর্মীদের ‘অযৌক্তিক দাবি’ মানার সুযোগ নেই। এই ঠেলাঠেলি কয়েক বছর ধরেই চলছে। 

সব মিলিয়ে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় সাড়ে ৫টার দিকেও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের উপস্থিতিতে একটি বৈঠক চলছিল।
এর ঘণ্টা তিনেক আগে ট্রেন চালু করতে আরো কয়েক দফা সমঝোতার বৈঠক হয়। রাজধানীর ঢাকা (কমলাপুর) রেলওয়ে স্টেশনে দুপুরে সব পক্ষকে নিয়ে ট্রেন চালু করতে বৈঠক হয়। কয়েক দফায় দুই ঘণ্টার বেশি বৈঠক চললেও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা যায়নি। 

কর্মবিরতি থেকে সরে আসতে রানিং স্টাফদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ ফাহিমুল ইসলাম।
ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। কিন্তু কোনো সুরাহা না হওয়ায় রানিং স্টাফরা বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান।

বৈঠকে অংশ নেওয়া রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের ঢাকা বিভাগের আহ্বায়ক সাইদুস রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘক্ষণ রেলসচিব, (ভারপ্রাপ্ত) মহাপরিচালক সঙ্গে বৈঠক করেছি। তবে কোনো সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছতে পারিনি বলে ওই বৈঠক চলাকালীনই আমি চলে আসছি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

বৈঠকে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তারা আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে যাবে বিষয়টা নিয়ে। তবে আমাদের দাবি না মানা হলে কর্মসূচি তুলব না।’

এদিকে রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, সন্ধ্যায় রেলপথ মন্ত্রণালয়ে রেল উপদেষ্টা, রেলসচিব ও রানিং স্টাফদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আরেক দফায় বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

‘যৌক্তিক দাবি যতটুকু পূরণ করা সম্ভব তা করেছি’

দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা চলতে থাকলেও সমাধান করতে পারিনি রেল মন্ত্রণালয়। রেল মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঠেলাঠেলিতে এই অবস্থানে গিয়েছে বিষয়টি। অবশেষে বন্ধ হয়ে গেছে ট্রেন চলাচল। 
এদিকে রানিং স্টাফরা দৈনিক ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বেসিকের (মূল বেতন) হিসেবে বাড়তি অর্থ পেতেন তাঁরা। যাকে রেলওয়ের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক দিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। ৮ ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা তিন মাসের সমপরিমাণ।

এ ছাড়া অবসরের পর মূল বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করে অবসরকালীন অর্থের হিসাব হতো। তবে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর এই সুবিধা সীমিত করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই সময়ের পর নতুন করে নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা পুরনোদের চেয়ে আরো কম সুবিধা পাবেন বলেও সরকার সিদ্ধান্ত নেয়।

২০২২ সালের পর নিয়োগপত্রে দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা চলন্ত ট্রেনে দায়িত্বপালনের জন্য রানিং অ্যালাউন্স ছাড়া অন্য কোনো ভাতা পাবেন না এবং মাসিক রানিং অ্যালাউন্সের পরিমাণ মূল বেতনের চেয়ে বেশি হবে না। এ ছাড়া অবসরে যাওয়ার ক্ষেত্রে সর্বশেষ আহরিত মূল বেতনের ভিত্তিতে পেনশন ও আনুতোষিক পাবেন। এরপর থেকে শুরু হয় জটিলতা। 
 

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, রেলের কর্মচারীদের যে যৌক্তিক দাবি তা যতটুকু পূরণ করা সম্ভব তা করেছি। এরপরও তারা কেন আন্দোলন করছে এমন প্রশ্ন করেছেন। রেলের কর্মচারীদের জন্য মানবিক কারণে যতটুকু করা দরকার করেছি। ওভারটাইম ইস্যুর সমাধান করা হয়েছে। এর বাইরের যেসব দাবি তা পূরণ করা সম্ভব নয়। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করতে হবে।

দিনভর ভোগান্তিতে ট্রেনের যাত্রীরা

রেলওয়ে রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে সারা দেশের সব স্টেশন থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ। এ বিষয়ে রেলওয়ে থেকে যাত্রীদের আগাম কোনো বার্তাও দেওয়া হয়নি। ফলে স্টেশনে এসে ফিরে যাওয়াসহ গন্তব্যে পৌঁছানো নিয়ে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

গতকাল সকাল থেকে দেশের বড় বড় রেল স্টেশনে মানুষের দুর্ভোগের চিত্র ছিল সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায়।

বেশিরভাগ যাত্রীদের অভিযোগ ‘ট্রেন বন্ধ আমাদের আগে কেন জানাল হলো না’। আর ট্রেন না চললে টিকিট কেন বিক্রি করেছে তারা। 

ট্রেনের যাত্রী বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, যোশোর যাওয়ার জন্য ২৫ তারিখে টিকিট কেটেছিলাম। (আজ) ১০টা ৪৫ মিনিটে রূপসী বাংলা ট্রেনে যশোর যাওয়ার কথা ছিল। আমি বাসে যাতায়াত করতে পারব না। ট্রেন যদি নাই যাবে, তাহলে টিকিট বিক্রি করল কেন? আমি তো মহাপবিপদে পড়েছি। এর দায় নেবে কে?

ট্রেন বন্ধে যাত্রীদের ক্ষোভ স্টেশন ভাংচুর

রানিং স্টাফদের কর্ম বিরতিতে ট্রেন বন্ধ থাকায় রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ভাঙচুর চালিয়েছেন ক্ষুব্ধ যাত্রীরা।

মঙ্গলবার স্টেশনে আসা কয়েকশো যাত্রী ট্রেন না পেয়ে সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত বিক্ষোভ ও এই ভাঙচুর চালান বলে জানিয়েছেন রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার শহীদুল আলম।

তিনি বলেন, ক্ষুব্ধ যাত্রীরা টিটিইদের একটি কক্ষের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন। এ সময় অন্য কক্ষগুলোর দরজা তালাবদ্ধ ছিল। স্টেশনে পেতে রাখা বেশকিছু চেয়ারও ভাঙচুর করেন যাত্রীরা। পরে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং টিকিটের টাকা সবাইকে রিফান্ড করা হয়েছে। 
ট্রেনের টিকিটে বাস, ‘বলি’ বিআরটিসি

ট্রেনের বিকল্প হিসেবে যাত্রী পরিবহনের জন্য সারা দেশে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাস সার্ভিস চালু করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি কিছুটা করেছে ঠিক। ট্রেনের টিকিট দেখিয়ে যাত্রীরা বাসে করে গন্তব্যের পথে রওনা করতে পেরেছেন। কিন্তু জটিলতায় পড়েছে খোদ বিআরটিসি। 

বিআরটিসি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ও বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, কুমিল্লা, বগুড়া স্টেশন থেকে ভিবিন্ন গন্তব্যে মোট ২৯টি বাস যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে। যাত্রীরা তাদের ক্রয় করা রেল টিকিটের মাধ্যমে এই ভ্রমণ করতে পেরেছেন। একইভাবে এসব স্থান থেকে ঢাকায় এই সার্ভিসের মাধ্যমে আসতেও পারবেন। তবে একই গন্তব্যে বেশি যাত্রী না হওয়ায় বাসগুলো পরিপূর্ণ হচ্ছে না।
 

নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিআরটিসির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, বিভিন্ন পথে যেখানে সেতুর টোল দিতে হবে সেই টাকাও আমাদের পকেট থেকে দিতে হয়েছে। এর বাইরে ২৯ বাসের জন্য আলাদা করে জ্বালানি খরচ রয়েছে। বাসগুলো ফিরতি পথে কীভাবে আসবে সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বাস যদি খালি আসে তাহলে লোকসান দিগুণ হবে। যেহেতু সড়ক ও রেলের উপদেষ্টা এমন নির্দেশনা দিয়েছেন তাই হঠাৎ সিদ্ধান্তে এমন দুর্গতিতে পরতে হলো। ২৯টি বাস চালানোর বিপরীতে বিআরটিসি কোনো টাকা পাবে কিনা- সেই নিশ্চয়তা এখনও পাওয়া যায়নি।   

হুঁশিয়ারি আমলে নেওয়া হয়নি

রানিং স্টাফদের দাবির বিষয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো মতামতের ভিত্তিতে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) একটি সভা ডেকেছিল রেলপথ মন্ত্রণালয়। কিন্তু দাবির বিষয়ে অনড় থাকায় সভায় যোগ দেননি রেলের রানিং স্টাফরা। দাবি মানা না হলে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) থেকে রানিং স্টাফরা যে টানা কয়েকদিন ট্রেন চালানো বন্ধ করে দেবেন এমন হুঁশিয়ারি ওই দিন ঘোষণায় রূপ নেয়। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা এই হুঁশিয়ারি বা ঘোষণা আমলে নেননি। তাই যাত্রীদেরকে সতর্ক করার মতো উদ্যোগ ছিল না রেলের। উল্টো ট্রেনের টিকিট বিক্রি অব্যাহত থাকে। 
বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা রেল মন্ত্রণালয়ের সভা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমাদের কোনো কর্মচারি সভায় অংশগ্রহণ করেনি। আমরা জানতে পেরেছি, আমাদের দাবি মানা হবে না। আমাদের কাছে আরো সময় চাওয়া হবে। সেজন্যই আমরা আলোচনা প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা মঙ্গলবার (আজ) থেকে ট্রেন চালানো বন্ধ করে দিয়ে কর্মবিরতিতে যাব। আমাদের কর্মসূচি কাল থেকে চলতে থাকবে। 

কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, গত ডিসেম্বরে আন্দোলন করলে রেলওয়ের কর্মকর্তারা আমাদের ডাকলেন। তারা আমাদের কাছে ১০ দিন সময় চেয়েছিলেন। আমি তাদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছি। কিন্তু তারা আমদের জন্য কিছু করতে পারলেন না। পরে ১ জানুয়ারি আমরা জানিয়ে দিলাম, আমরা আগামী ২৮ জানুয়ারি থেকে ট্রেন চালাব না।








মুক্তআলো২৪.কম

 
আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত