ঢাকা, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ || ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
Breaking:
সশস্ত্র বাহিনী দিবস: শিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা     
Mukto Alo24 :: মুক্ত আলোর পথে সত্যের সন্ধানে
সর্বশেষ:
  বাংলাদেশ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায় : প্রধান উপদেষ্টা        জঞ্জাল পরিষ্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিন : মির্জা ফখরুল        শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশে সহায়ক শিক্ষাব্যবস্থা দরকার : ড. মুহাম্মদ ইউনূস     
১০০৭

শেখ রাসেল : ফিরে যাই ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাড়ির দোতলায়

অধ্যাপক ডা.মামুন আল মাহতাব(স্বপ্নীল)

প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২২  

​​​​​​​অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

​​​​​​​অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)


অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল):
 
আজ শেখ রাসেলের জন্মদিন। সারাদেশে এই দিনটি উদযাপিত হচ্ছে শেখ রাসেল দিবস হিসেবে। বাংলাদেশের আর কোনো শিশুকে যাতে শেখ রাসেলের মতো অমন করুণ পরিণতি বরণ করতে না হয়, শোককে বুকের গভীরে পাথর চাপা দিয়ে, বাংলাদেশ তথা বিশ্বের সব শিশুর জন্য নিরাপদ একটি বাসভূমির নিশ্চয়তা নিশ্চিত করার প্রত্যায়ে দিবসটি উদযাপন করবে রাসেলের শোকে স্তব্ধ বাঙালি জাতি।  জাতির পিতার প্রিয় ব্যক্তিত্ব বারট্রান্ড রাসেলের নামে করা হয়েছিল পরিবারটির সর্বকনিষ্ঠ এই সদস্যের নামকরণ। পরিণত বয়সে শেখ রাসেল তার কর্মগুণে বারট্রান্ড রাসেলকে ছাড়িয়ে যেতেনকি যেতেন না, তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। উপসংহার আসবে না কখনোই। ঘাতক সেই উপসংহারে পৌঁছানোর সুযোগ আমাদের দেয়নি। অকালেই থেমেছে অপরিণত রাসেলের জীবন। তবে যার বাবার হাত ধরে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ আর যার বোনের কল্যাণে আমরা আগামীর স্বপ্নীল স্বপ্নেবিভোর, সেই শেখ রাসেল আজ আমাদের মাঝে থাকলে যে আমাদের গর্বিত করতেন আর গর্বিত হবার কারণ হতেন, সেই কথা বোধহয় অবলীলায়-ই বলা চলে।

বঙ্গবন্ধুর কতো যে প্রিয় ছিলেন শেখ রাসেল, তা বঙ্গবন্ধুর সাথে জাপান সফরে তার ছবিগুলোতে স্পষ্ট। ১৫ আগস্টের রাতে জাতি হিসাবে আমরা ব্যর্থ হয়েছিলাম জাতির পিতা আর তার পরিবারকে ঘাতকের বুলেট থেকে রক্ষা করতে। মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার মিথ্যা আশ্বাসে ঘাতক তাকে নিয়ে গিয়েছিল ৩২-এর দোতলায়। সেখানে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের শহীদের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজিত হয়েছিল শেখ রাসেলের নামটি। দোতলায় যাওয়ার পথে তাকে মাড়িয়ে যেতে হয়েছিল জাতির পিতার রক্তাক্ত নিথর দেহ।

একবার ভাবুন তো, ওই অত্তটুকুন শেখ রাসেলকে কীসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিলো। আশা-হতাশার দোলাচলে এক একটি সেকেন্ড তার কাছে কত সহস্র বছর সম মনে হয়েছিলো। শেখ রাসেলের হত্যাকাণ্ডের কথা মনে করলে আমার কাছে ১৫ আগস্ট পরবর্তী এদেশের শাসক শ্রেণীর বৈশিষ্টগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। একটি শিশুকে চরমতম মানসিক নির্যাতনের পর প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে দোতলায় গিয়ে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। নিষ্ঠুরতা, প্রতারণা আর হঠকারিতা- এই তো ছিল আমাদের ’৭৫ পরবর্তী শাসকদের চরিত্র। 
 

১৫ আগস্টের অপরাধের যে ব্যাপ্তি, তার বিচার গুটিকয়েক খুনির ফাঁসির রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে কখনই শেষ হয়ে যায় না। এই কয়জন অফিসারই তো শেষ কথা নয়। তাদের সাথে সেদিন যেসব সৈনিকরা অপারেশনে অংশ নিয়েছিল, তাদের বিচারের কী হবে? কমান্ডিং অফিসারের অন্যায় কমান্ড মানাই অন্যায়, না মানাটা নয়। এই বিতর্কেও অবসান হয়ে গিয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলাকালীন সময়েই। আমাদের দেশেও ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময় মানবতাবিরোধী এই অপরাধের সংজ্ঞা অনুসরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৫ আগস্টের নেপথ্যের কুশিলবদেও বিচারেরইবা কী হবে? শুধু মরে গিয়েই কি বেঁচে যাবে মোশতাক-জিয়া-তাহেরঠাকুর-মাহবুবুল আলম চাষি গং। তাছাড়া আমরা কি হলফ করে বলতে পারি, সেদিন শেখ রাসেলের হত্যায় যারা অংশ নিয়েছিল সরাসরি, কিংবা যারা ছিল নেপথ্যে, তাদের সবাই কি মৃত্যুবরণ করেছে? তাদের কারও নিঃশ্বাসে কি এখনও কলুষিত হচ্ছে না বাংলার পবিত্র বাতাস। 

শেখ রাসেলের জন্মদিনে আমাদের ইতিহাস আর এই দেশের পবিত্র বাতাসকে কলঙ্কমুক্ত করার এতোটুকু প্রত্যাশা তো আমরা করতেই পারি। ’৭১-এআমাদের শ্লোগান ছিলো, ‘এরা মানুষ হত্যা করছে, আসুন আমরা পশু হত্যা করি’। তখন তো আমাদের পূর্বসূরিরা পিছিয়ে ছিলেন না, তাহলে আমরা কেন পিছিয়ে?

লেখক: ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ

আরও পড়ুন
পাঠক কলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত