স্থানীয় জনগণ ও বাস্তবতা বিবেচনা করে পরিকল্পনা প্রণয়নে অর্থনীতিবিদ

মুক্তআলো২৪.কম

মুক্ত আলো

প্রকাশিত : ০৭:৫২ পিএম, ১৭ মে ২০২৪ শুক্রবার

স্থানীয় জনগণ ও বাস্তবতা বিবেচনা করে পরিকল্পনা প্রণয়নে অর্থনীতিবিদের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

স্থানীয় জনগণ ও বাস্তবতা বিবেচনা করে পরিকল্পনা প্রণয়নে অর্থনীতিবিদের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় জনগণ ও বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা, নীতি ও কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য দেশের অর্থনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি অর্থনীতিবিদদের কাছে এটাই প্রত্যাশা করি দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে আপনারা আপনাদের পরিকল্পনা ও নীতিমালা প্রণয়ন করবেন।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউশন মিলনায়তনে  ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২২তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন-২০২৪’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
বিদেশীর পরামর্শ এখানে ফলপ্রসূ হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোন একজন দু’একদিনের জন্য দেশে এসে আমাদের উপদেশ দিয়ে যাবে, ওই উপদেশ আমাদের কাজে লাগবে না। কাজে লাগবে নিজের চোখে দেখা এবং মানুষের জন্য করা।এটাই কাজে লাগবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘হ্যাঁ বাইরে থেকে আমরা শিখবো কিন্তু, করার সময় নিজের দেশকে দেখে করবো, মানুষকে দেখে করবো। আমাদের কী সম্পদ আছে সেটা দেখে করবো।’
গবেষণা আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমি অর্থনীতি সমিতিকে বলবো আপনারা গবেষণা করছেন, আমাদের গবেষণা দরকার। আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে দেশকে মুক্ত রাখার পদক্ষেপ যেমন আমরা নিয়েছি পাশাপাশি। দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মত মৌলিক অধিকারগুলো যাতে সুনিশ্চিত হয় সেটা মাথায় রেখেই আমাদের সব নীতিমালা এবং কার্যক্রম আমরা পরিচালনা করে যাচ্ছি।  
তিনি বলেন, ‘দেশকে ডিজিটালাইজড করায় এখন প্রত্যন্ত ইউনিয়নে ঘরে বসেও মানুষ ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে বিদেশ থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারছে এবং ২০২৬ সাল থেকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হবো তা কার্যকর শুরু হবে।’
সরকার প্রধান বলেন, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা কার্যকর হবার পর যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে সেগুলো মোকাবেলা করা আর যে সুযোগগুলো আসবে সেগুলো কাজে লাগানোর মত পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২১ থেকে ২০৪১’ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছি যার লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি উন্নত ‘সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে উঠবে। পাশাপাশি নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে উত্থান-পতন, অনেক চড়াই-উৎড়াই থাকবে এবং সেগুলোকে অতিক্রম করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। হতাশ হবার কিছু নেই, কেউ হতাশ হবেন না।
শত প্রতিকুলতা, গুলি, গ্রেনেড, বোমা হামলা-সবরকম বাধা অতিক্রম করেই তিনি এগিয়ে চলেছেন উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমার লক্ষ্য হচ্ছে, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে এই দেশকে উন্নত করা। আমরা অনেকদূর এগিয়েছি, ইনশাল্লাহ এই দেশটা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেভাবেই এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘যত বাধাই আসুক সে বাধা বাধা নয়, সে বাধা আমরা অতিক্রম করতে পারবো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারাবানা’। কাজেই, কেউ আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না।’
দুই দিনব্যাপী দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড.আবুল বারকাত।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. আইনুল ইসলাম।
গ্রামের অর্থনীতি বদলে গেছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, যারা আগে একবেলা ভাত খেতে পারতো না, এখন দেখা যাচ্ছে প্রয়োজনে চারবেলাও খাচ্ছে। যেখানে হাট-বাজারের বাইরে কিছু পাওয়া যেতো না, এখন সুপার মার্কেট হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি অর্থনীবিদদের বলবো আপনারা চিন্তা করেন, গ্রামীণ অর্থনীতি যত বেশি মজবুত হচ্ছে আমাদের শিল্প কল-কারখানা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজার সৃষ্টি হচ্ছে, সেক্ষেত্রে রপ্তানিও আমাদের বাড়াতে হবে।
দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে ব্যবসায়ীদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করুন। আমরা সবসময় আপনাদের পাশে আছি। ব্যবসায়ীদের উদ্ভাবনী ধারণা কাজে লাগিয়ে রপ্তানি বাড়াতে পণ্যের নতুন বাজার ও খুঁজে বের করতে হবে। এ জন্য সরকার সর্বদা তাদের পাশে থাকবে।
আওয়ামী লীগ কখনো কোনো ব্যবসায়ীকে তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা দেখে বিচার করে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা সবসময় দেশের মানুষের কল্যাণের কথা ভাবি। আজকের বাংলাদেশ একটি পরিবর্তিত বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশকে আরও টেনে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটলে মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো হবে। এ লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে এবং বাকি প্রতিবন্ধকতাগুলোও শিগগিরই সমাধান করা হবে।
তিনি আরও বলেন, অন্তত এইটুকু বলতে পারি যে, আমি ‘হাওয়া ভবন’-এর মতো কোনও ‘খাওয়া ভবন’ করিনি যা ব্যবসার জন্য অসুবিধা তৈরি করবে। সরকার ব্যবসায়ীদের সব সময় সহযোগিতা করবে। আমরা চাই, ব্যবসায়ীরা ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে এগিয়ে আসুক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনীতির গতিকে যেভাবে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম মাঝখানের কয়েকটি আন্তর্জাতিক ঘটনা আমাদের জন্য বাধা হয়ে দাড়ালো। যদিও আমাদের দেশের অভ্যন্তরেও কিছু বাধা দেওয়া হয়েছিল। আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানো, অগ্নিসন্ত্রাস ২০১৩ ও ২০১৪ সালে এবং ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের পর। নতুন বাস কিনি, ট্রেন কিনি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। রেলগাড়ি পুড়িয়ে দেয়, মানুষ পুড়িয়ে মারে- এইগুলোও তো আমাদের সামাল দিতে হয়। একদিকে এই দুর্যোগ আবার আন্তর্জাতিক চাপ, সবকিছু মিলিয়েই আমি এগিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আগামী ৬ তারিখে আমরা বাজেট দেব। ইনশাল্লাহ বাজেট আমরা ঠিকমতো দিতে পারবো এবং বাজেট আমরা বাস্তবায়নও করবো। তবে, আমরা যেহেতু যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞার জন্য কিছুটা কৃচ্ছতা সাধন করতে গিয়েছি, এই কৃচ্ছতা সাধনের কারণে হয়তো জিডিপি গতবার যা ছিল তার থেকে কিছুটা কম হতে পারে। কিন্তু সেটাও আমরা পরবর্তীতে উত্তোরণ ঘটাতে পারবো, সে বিশ^াস আমার আছে। সেভাবেই আমরা পরিকল্পনা নিচ্ছি। 
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের প্রতিইঞ্চি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বৃদ্ধির গুরুত্বারোপ করে বলেন, আমাদেরকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে হবে। কারো কাছে হাত পেতে নয়। 
এ সময় তিনি বিশ^ব্যাংকের ভূয়া দুর্নীতির অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একে মিথ্যা প্রমাণ করে পদ্মার সেতুর মত মেগাপ্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। পাশাপাশি পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এই রেলপথ চলে যাবে একেবারে মোংলা বন্দর পর্যন্ত।
শেখ হাসিনা বলেন, এভাবেই সারাদেশে তাঁর সরকার নৌপথ, রেলপথ, বিমান, ও সড়কপথ ইত্যাদির উন্নয়ন ঘটিয়েছে সীমিত সম্পদ দিয়ে। পাশাপাশি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, উৎপাদন বাড়ানো, সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে এসেছে। যেখানে ৩০ প্রকারের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। বছরের শুরুতেই বিনামূল্যে মাধ্যমিকস্তর পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, সাধারণ এবং উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি ও উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যতটুকু সম্পদ আছে, সেটা দিয়েই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করাই আমার লক্ষ্য। সেখানে আপনাদের (অর্থনীতিবিদ) সহযোগিতা চাই।




মুক্তআলো২৪.কম