রোডম্যাপের কথায় উপদেষ্টাদের অস্বস্তি গণ-আকাঙ্ক্ষাবিরোধী : তারেক

মুক্তআলো২৪.কম

মুক্ত আলো

প্রকাশিত : ০৭:৫১ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ রোববার

রোডম্যাপের কথায় উপদেষ্টাদের অস্বস্তি গণ-আকাঙ্ক্ষাবিরোধী : তারেক রহমান

রোডম্যাপের কথায় উপদেষ্টাদের অস্বস্তি গণ-আকাঙ্ক্ষাবিরোধী : তারেক রহমান


‘শত অস্পষ্টতা কাটিয়ে অচিরেই নির্বাচনী রোডম্যাপে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করবে’ বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ রবিবার বিকালে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তারেক রহমান এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার কী করতে চাইছে, রাষ্ট্র মেরামতের জন্য অন্তর্বতীকালীন সরকারের আর কত মাস কিংবা কত সময় প্রয়োজন সেটি জানার অধিকার জনগণের রয়েছে।’

রোডম্যাপের প্রসঙ্গ টেনে তারেক রহমান বলেন, ‘অন্তবর্তীকালীন সরকারের আগামী দিনের কর্ম-পরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণার কথা শুনলেই যদি উপদেষ্টাদের চেহারায় অস্বস্তির ছাপ ফুটে ওঠে, সেটি হবে অবশ্যই গণআকাঙ্ক্ষা-বিরোধী।
তারেক রহমান বলেন, ‘সরকার জনগণের সামনে তাদের আগামী দিনের কর্ম পরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করলে একদিকে জনগণের কাছে সরকারের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। অপরদিকে, প্রশাসনিক কার্যক্রমেও গতিশীলতা আসবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, শত অস্পষ্টতা কাটিয়ে অচিরেই নির্বাচনী রোডম্যাপে যাত্রা শুরু করবে আমাদের প্রিয় এই বাংলাদেশ। সেই যাত্রায় আবারো বলছি, মন দিয়ে শুনবেন দলের প্রতিটি নেতাকর্মী, আপনাদের বিশ্বস্ত সঙ্গী হচ্ছে দেশের গণতন্ত্রকামী স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণ।
আপনারা জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সঙ্গে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের তাদের সকল কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের কাছে যত বেশি স্বচ্ছ থাকবে জনগণও সরকারের প্রতি ততবেশি সমর্থনের হাত প্রসারিত রাখবে।’

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশ ও স্বাধীনতা রক্ষা পেয়েছে। এই কারণে প্রায় আমি বলে থাকি, ১৯৭১ সাল ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্জনের, আর ২০২৪ সাল দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা রক্ষার।
তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে এবারের বিজয় দিবস অবশ্যই বেশি আনন্দের, গৌরবের এবং অনেক বেশি অর্থবহ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই, আগামীর বাংলাদেশে প্রতিটি স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস হয়ে উঠবে জনগণের প্রতি রাষ্ট্র ও সরকারের দায় কিংবা প্রতিশ্রুতি পূরণের একটি অর্থবহ দিন।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘রাষ্ট্র ও জনগণকে স্বনির্ভর ও শক্তিশালী করতে হলে রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের লালন, বিকাশ এবং চর্চা অত্যন্ত জরুরি। আমরা মনে করি, রাষ্ট্র ও সমাজে গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা অন্যতম প্রাতিষ্ঠানিক কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত জাতীয় সংসদ।’

তিনি বলেন, ‘জবাবদিহিমূলক সরকার ও সংসদ যথাযথভাবে কার্য্কর থাকলে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত থাকে।

আমাদের মনে রাখা দরকার জনগণ শক্তিশালী না থাকলে জাতীয় ঐক্যও শক্তিশালী হয় না।’

দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো হাসপাতালে ডেঙ্গুতে মানুষের মৃত্যু অব্যাহত রয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ যোগাতে অনেকের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। এর পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সমাজের প্রায় প্রতিটি মানুষ। প্রতিদিনের সংসারের ব্যয় মেটাতে জনগণকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘জনজীবনের নিত্য দুর্ভোগ কিংবা বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করে অন্তবর্তীকালীন সরকার যদি শুধু সংস্কারের নামে সময় সংক্ষেপ করে, তাহলে জনগণের কাছে সংস্কার আগে না সংসার আগে এই প্রশ্নটি মূখ্য হয়ে উঠতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘দুর্ভোগ বর্তমানে মেনে নিলেও জনগণ এখনো সরকারের বিরুদ্ধে তেমন উচ্চবাচ্য করছেন না। কারণ জনগণ বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সফল দেখতে চায়।’
 

তিনি বলেন, ‘তবে আগেও বলেছি, আজো উল্লেখ করতে চাই, অন্তবর্তীকালীন সরকার নিজেরা নিজেদেরকে সফল দেখতে চায় কি না তা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমেই প্রমাণ করতে হবে।’

তারেক রহমান বলেন, ‘একটি দেশের জন্য ৫৪ বছর সময় কম নয়। এই কথাটি গতকাল একজন প্রতিবন্ধী ভাই উল্লেখ করেছেন, তার কিছু কথা বলতে গিয়ে। লাখো মানুষের রক্তের ওপর দিয়ে দেশের জনগণ আজ অভূতপূর্ব ঐক্যের মোহনায় এসে দাঁড়িয়েছে। এই ঐক্য কাজে লাগিয়ে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘একটি বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ইতিমধ্যেই ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই কর্মসূচির লক্ষ্যই হচ্ছে শিশু-নারী-বৃদ্ধ অথবা দলমত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে রাষ্ট্রকে অবশ্যই প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব নিতে হবে।’
 

এ সময় সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা এখন যেটা চাই, প্রত্যেকটি বাংলাদেশি এই মুহূর্তে যেটা চায় সেটা হচ্ছে, তারেক রহমানের নেতৃত্ব চায়।’

তিনি বলেন, ‘আসুন আমাদের নেতা তারেক রহমানের যুগান্তকারী ৩১ দফা কর্মসূচিতে আমরা সামনে দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই। আমি বারবার যে কথাটা বলছি, আবার বলতে চাই যে, সবচেয়ে বেশি যে প্রয়োজন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সেটা হচ্ছে যে, আমাদের অবশ্যই অতি দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই সংস্কারের পথটা আমাদের সুগম করতে হবে। সেটাই হচ্ছে একমাত্র যোগ্য কাজ, সেটাই হবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন দাবির।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন আমরা যারা বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থক রয়েছি, আমরা সবাই একসাথে একযোগে এই লক্ষ্যে এগিয়ে যাই। আর একটি কথা মনে রাখতে হবে, যে কথাটা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বারবার বলছেন যে, আপনাদের আচার-আচরণের ওপর নির্ভর করবে যে, সামনের দিনে জনগণের ভালোবাসা পাবে কি না। সেই কথা চিন্তা করেই আমরা যেন এগিয়ে যাই।’
দলের প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুবদলের এম মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন বক্তব্য দেন।







মুক্তআলো২৪.কম