তিব্বতে ভূমিকম্পে অন্তত ১২৬ জনের প্রাণহানি, জীবিতদের খোঁজে

মুক্তআলো২৪.কম

মুক্ত আলো

প্রকাশিত : ০৫:২৯ পিএম, ৮ জানুয়ারি ২০২৫ বুধবার

তিব্বতে ভূমিকম্পে অন্তত ১২৬ জনের প্রাণহানি, জীবিতদের খোঁজে অনুসন্ধান চলছে

তিব্বতে ভূমিকম্পে অন্তত ১২৬ জনের প্রাণহানি, জীবিতদের খোঁজে অনুসন্ধান চলছে


চীনের প্রত্যন্ত তিব্বত অঞ্চলে ভযাবহ ভূমিকম্পে কমপক্ষে ১২৬ জন প্রাণ হারিয়েছে। হিমালয়ের পাদদেশে হিমশীতল পরিবশে হাজার হাজার উদ্ধারকারী বুধবার জীবিতদের খুঁজে বের করতে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। বেইজিং থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

বুধবার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম সিসিটিভি প্রকাশিত এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, উদ্ধারকর্মীরা ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে আহতদের টেনে বের করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন।

ফুটেজে আরও দেখা যায়, ধুলোমাখা, মোটা শীতের কোট পরা একব্যক্তি কাঁদতে থাকা একটি শিশুকে বহন করছেন এবং একজন উদ্ধারকর্মী তার গায়ের উপর একটি জ্যাকেট জড়িয়ে দিচ্ছেন।

মঙ্গলবার সকালে নেপালের সাথে চীনের সীমান্তের কাছে মাউন্ট এভারেস্টের প্রায় ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল) উত্তরে অবস্থিত গ্রামীণ, সুউচ্চ খাড়াই টিংরি কাউন্টিতে আঘাত হানা ভূমিকম্পে কমপক্ষে ১২৬ জনের মৃত্যু এবং ১৮৮ জন আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।

সরকারি বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, ভয়াবহ ওই ভূমিকম্পে  ৩ হাজার ৬০০ টিরও বেশি বাড়িঘর ধসে পড়েছে এবং ৩০ সহস্রাধিক বাসিন্দাকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। আটকে পড়াদের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।

এতে আরো বলা হয়, উদ্ধারকারীরা ঘরবাড়ি হারানো বাসিন্দাদের জন্য এমন একটি এলাকায় তাঁবু স্থাপনের জন্য সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটছেন যেখানে তাপমাত্রা হ্রাস পাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

চীনের আবহাওয়া প্রশাসনের তথ্যানুসারে, টিংরির তাপমাত্রা বর্তমানে মাইনাস ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২.২ ফারেনহাইট)। কাউন্টিটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে ৪,৫০০ মিটার (১৪,৮০০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত।

কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সিনহুয়া জানিয়েছে, দমকলকর্মী, সৈন্য, পুলিশ অফিসার ও পেশাদার উদ্ধারকারীসহ ১২ সহস্রাধিক লোককে উদ্ধারকাজে মোতায়েন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ তাঁবু, কম্বল এবং ঠান্ডা আবহাওয়ার উপযোগী সরঞ্জামসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রেরণ করেছে।

পর্যটক মেং লিংকাং ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরের লাতসে শহরে পৌঁছে ভবনগুলোয় ফাটল দেখতে পেয়েছেন। ২৩ বছর বয়সী ওই পর্যটক বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘কিছু পুরানো বাড়ি ধসে পড়েছে এবং ইটের তৈরি ভবনগুলোর বড় অংশ ফেটে গেছে এবং বড় ধরনের ফাটল ধরেছে।’

 তিনি আরো জানান, ‘সেখানে বেশ ক’টি উদ্ধার গাড়ি ছিল এবং সেগুলো একের পর এক এসে পৌঁছায়।

-'গভীরভাবে দুঃখিত'-
চায়না আর্থকোয়েক নেটওয়ার্ক সেন্টার (সিইএনসি) তীব্র ওই ভূমিকম্পের মাত্রা  ৬.৮  পরিমাপ করেছে, তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ এটির মাত্রা ৭.১ বলে জানিয়েছে। এভারেস্টের চীন অংশের পাবত্য ভূখণ্ড দ্বারা বেষ্টিত এলাকাটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল টিংরি প্রায় ৬২ হাজার লোকের আবাসস্থল। তিব্বতের রাজধানী লাসার তুলনায় এলাকাটি অনেক কম উন্নত। ধসে পড়া বাড়িঘরগুলোর মধ্যে বেশ ক’টি পাথর, মাটির তৈরী ইট ও কাঠের বিমের মতো প্রচলিত উপকরণ দিয়ে নির্মিত।

সিসিটিভি জানিয়েছে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যতটা সম্ভব হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সঠিকভাবে পুনর্বাসন এবং শীতকালে তাদের নিরাপত্তা ও উষ্ণতা নিশ্চিত করায় সর্বাত্মক অনুসন্ধান ও উদ্ধার প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস  ভূমিকম্পে প্রাণহানিতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন।  

গুতেরেস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘জাতিসংঘ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং অনুরোধ করা হলে সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।’

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন তার ‘আন্তরিক সমবেদনা’ ব্যক্ত করেছেন।  

শিগাতসের প্রশাসনের অধীনে টিংরি প্রিফেকচার-স্তরের শহর, যেখানে দালাই লামার পরে তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব পঞ্চেন লামার ঐতিহ্যবাহী আসন অবস্থিত।

দালাই লামা বলেছেন, তিনি ‘গভীরভাবে দুঃখিত’।

নির্বাসিত আধ্যাত্মিক নেতা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের জন্য আমি আমার প্রার্থনা জানাই এবং যারা আহত হয়েছেন তাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’

- সবচেয়ে শক্তিশালী-
রাজধানী কাঠমান্ডু ছাড়াও, নেপালের লোবুচের আশেপাশের অঞ্চলগুলো এভারেস্টের কাছের উচ্চ পর্বতমালায় মঙ্গলবার কম্পন হয়েছে এবং ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পনে বিপর্যস্ত হয়।

ভারতে বিহার রাজ্যেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। তবে দেশটিতে এখনও পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

সিইএনসি বলেছে, মঙ্গলবারের ভূমিকম্পটি ছিল গত পাঁচ বছরে মধ্যে ২০০-কিলোমিটার ব্যাসার্ধের রেকর্ড করা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। 

চীনে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে একটি ভূমিকম্পে ১৪৮ জন প্রাণ হারায় এবং গানসু প্রদেশে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।








মুক্তআলো২৪.কম