জাকারবার্গ তিনি কি ইতালির?
অনলাইন ডেস্ক
মুক্তআলো২৪.কম
প্রকাশিত : ০৯:৪৭ পিএম, ১৩ জুলাই ২০১৪ রোববার | আপডেট: ০৭:৫৪ পিএম, ২৩ আগস্ট ২০১৪ শনিবার
না চেনার কথা নয় ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গকে । কিন্তু ইতালির ম্যাটিও আচিলিকে কতজন চেনেন? ইতালি থেকে মার্ক জাকারবার্গের মতোই উদ্যোগ নিয়ে উঠে আসছেন আচিলি।হার্ভার্ডের ছোট্ট ডরমেটরিতে বসে জাকারবার্গ তৈরি করেছিলেন ফেসবুক। ম্যাটিও আচিলি যখন হাইস্কুলে পড়তেন সেই ১৯ বয়সেই তৈরি করে ফেলেছিলেন ইতালির সোশ্যাল ও প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক ইগমনিয়া ডটকম (https://world.egomnia.com/) যা চাকরি খুঁজতে সাহায্য করে। বর্তমানে ২২ বছর বয়সী ম্যাটিও আচিলি মিলানের বোক্কনি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজনেস স্টাডিজ বিষয়ে পড়াশোনা করছেন। এ বছরের সেপ্টেম্বরেই আইন, প্রযুক্তি ও ফাইন্যান্স বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে তাঁকে আবার এ সময়ই তাঁর ইগনমিয়া নামের উদ্যোগটিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা তাঁর। ইগমনিয়াকে অনলাইন রিক্রুটমেন্টের ক্ষেত্রে সারা বিশ্বে পরিচিত করে তুলতে গুগল, মাইক্রোসফট, ভোডাফোন, বুলগারি, জেনারেলি, এরিকসনের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করবেন তিনি।
ম্যাটিওর নিজের মুখেই শুনুন তাঁর জাকারবার্গ হয়ে ওঠার সাধনার কথা, ‘আজ থেকে মাত্র তিন বছর আগে হাইস্কুলের শেষপর্যায়ে পড়ার সময়ই তৈরির পরিকল্পনা মাথায় আসে। মাঝে মাঝে আমি ভুলে যাই যে আমার বয়স মাত্র ২২। আমি ভাবলাম, আমরা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব বলে ভাবি তার র্যাঙ্কিং দেখি। যদি, চাকরিপ্রার্থীরা তাঁদের কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানের র্যাঙ্কিং দেখতে পেত? আর নিজের জীবনবৃত্তান্ত চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের জন্য কতখানি উপযুক্ত তা মিলিয়ে দেখতে পারতো? ভাবনাটি খুব সাধারণ হলেও একজন স্কুলের শিক্ষার্থীর পক্ষে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া এবং তার পেছনে অর্থ খরচ করা খুব সহজ নয়।’
ম্যাটিওর ভাষ্য, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয় ইতালিতে এ ধরনের উদ্যোগের ক্ষেত্রে সাহায্য করার মতো কোনো ইকোসিস্টেম নেই তাই আমাকে নিজে থেকেই শুরু করতে হল। এরপর আমি বেশ কিছু পেশাদার কোড লেখকের কাছে অ্যালগরিদম তৈরি করে দেওয়ার জন্য বললাম। কিন্তু তাঁরা এক লাখ ৩৫ হাজার ডলার চেয়ে বসল। এত অর্থ! কোথায় পাব? উদ্যোগ এখানেই ভেস্তে যেতে পারতো। কিন্তু আমি দমে না গিয়ে শিক্ষার্থী কোড লেখকদের কাছে গেলাম। তাঁরা খুব কম খরচে আমার চাহিদা মতো অ্যালগরিদম তৈরি করে দিল। এক্ষেত্রে অর্থের জোগানদাতা হিসেবে এগিয়ে এলেন আমার বাবা।’
কিন্তু ১৯ বছর বয়সী এক উদ্যোক্তা আর তাঁর সাধারণ এই অ্যালগরিদমকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবে কে? ম্যাটিও বলেন, ‘বক্কোনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আমি প্রথম সাহায্য পেলাম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্র আমার ওয়েবসাইট ও ধারণা নিয়ে একটি লেখা প্রকাশ করল যা জাতীয় বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হল। সাইটটি যখন চালু করা হল তখন এতে মাত্র এক হাজার ব্যবহারকারী ও ২০টির মতো প্রতিষ্ঠান ছিল। কিন্তু ভাগ্য খুলে গেল যখন ইতালির প্রভাবশালী প্যানোরোমা ম্যাগাজিন তাঁদের কভার স্টোরি হিসেবে আমাকে রেখে শিরোনাম দিল ‘ইতালিয়ান জাকারবার্গ’।
এরপর থেকে অনেক প্রতিষ্ঠান ইতালিয়ান জাকারবার্গের খোঁজ করতে শুরু করল এবং অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাইক্রোসফট। যাত্রা শুরুর দুই বছর পরে এখন ইগমনিয়া সাইটে আড়াই লাখ ব্যবহারকারী ও ৭০০ প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
নিজেকে তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে ধন্য মনে করছেন ম্যাটিও। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ইন্টারনেটের ইতিহাস লিখছি। সত্যিকারের বিশেষজ্ঞ হচ্ছে তরুণরা, সাদা চুলের বয়স্করা নন। ২২ বছর বয়সী হিসেবে এটা সত্যিকারের একটি উদ্ভাবন। শুরুতে আমার কাছে মনে হয়েছিল কম বয়সী হিসেবে এটা হয়তো ঠিক নয়, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমার তারুণ্যই আমার সাফল্যের মূলমন্ত্র।’
ম্যাটিও জানান, ইতালির বাইরেও তাঁর প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। কয়েক মাসের মধ্যেই ব্রাজিলের সাও পাওলোতে অফিস খুলবেন তিনি। ওয়েবসাইটটির ইংরেজি ও পর্তুগিজ সংস্করণ রয়েছে এখন।
ম্যাটিওকে নিয়ে একটি চলচ্চিত্রও তৈরি হচ্ছে যাতে মূল চরিত্রে অভিনয়ের জন্য পরিচালক তাঁকেই প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু ম্যাটিও এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন। সম্ভবত এই সময়টা তিনি তাঁর আইন, টেকনোলজি, ফাইন্যান্স পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করবেন।