ফিরোজা বেগমের মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন পশ্চিমের আকাশ

অনলাইন

মুক্তআলো২৪.কম

প্রকাশিত : ১০:২১ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বুধবার | আপডেট: ১০:০০ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ বৃহস্পতিবার

প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগম।

প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগম।

’বাংলা সঙ্গীত যেন এক কিংবদন্তি তারাকে হারাল,শুধু পূর্ব বাংলার আকাশই নয়। প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগমের মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গের আকাশও এদিন ছিল শোকাচ্ছন্ন। নজরুল পরিবার থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী। সবার মনে যেন স্বজন হারানোর ব্যথা। তাদের মুখে যেন একই উচ্চারণ, । আর তাঁর রেখে যাওয়া গান, গায়কি এবং নিজস্বতা আগামী কয়েক শতকেও ম্লান হবার নয়। বরং তাঁর রেখে যাওয়া নিজস্বতা নজরুল গীতি জন্য নয় সব ধরণের সঙ্গীত বিশেষ করে আধুনিক সঙ্গীতে নতুনরা পাথেয় হিসাবে মেনে নেমেন।
দুই বাংলার প্রখ্যাত নজরুলী সঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগনের মৃত্যুতে রাজ্যের সঙ্গীত প্রিয় মানুষের হয়ে শোকাগ্রস্থ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের পুত্রবধূ কল্যানী কাজী, নজরুল সঙ্গীত শিল্পী চন্দ্রাবলি দত্ত, প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শ্রাবন্তি সেন এবং ব্যান্ড সঙ্গীত শিল্পী রুপম ইসলাম।
ফিরোজা বেগমের মৃত্যুতে নিজেকে অত্যন্ত অসহায় মনে করছেন কল্যাণী কাজী। তাঁর ভাষায়, নজরুল ইসলামের বহু হারিয়ে যাওয়া গান উদ্ধার করেছেন ফিরোজা বেগম এবং কমল দাশগুপ্ত। শুধু নজরুল গীতি নয়, ফিরোজা বেগমের কণ্ঠে আধুনিক গানও যেন অন্যমাত্রা ছুঁয়ে যেত। আমি নজরুলের পুত্রবধূ হওয়ার আগেই ওর গান শুনে ওর ভক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। যদিও পরবর্তীতে ফিরোজা দিবি যখন নজরুলের সান্নিধ্যে এলেন, তখন আমার সঙ্গে ভাব ছিল যেন বন্ধুর মতো। নজরুলের অনেক কিছুই ফিরোজা বেগমের মধ্যে খুঁজে বেরাতম আমি। তাঁর এই মৃত্যুতে সত্যিই যেন অহসায় মনে হচ্ছে আমার।
সঙ্গীত শিল্পী চন্দ্রাবতি দত্ত জানালেন ফিরোজা বেগম তাঁর পরক্ষ গুরু ছিলেন। তার গায়কি তাঁর নিজস্বতা যেন হাজার বছর ধরে বেঁচে থাকবে। সরাসরি ফিরোজা বেগমের কাছ থেকে তাঁর কোন শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ হয়নি। কিন্তু তাঁর সিডি-ক্যাসেট কিংবা টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান দেখে ফিরোজা বেগমের মতো নিজস্বতা করার চেষ্টা করেছেন বলেও অকপট স্বীকার করেন চন্দ্রাবতি দত্ত।
ঠিক একই রকমভাবে আবেগতারিত হয়ে কষ্টের কথা জানালেন দুই বাংলার জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী রুপম ইসলাম। তিনি বললেন, সরাসরি আমার এই কিংবদন্তি শিল্পীর সঙ্গে কোনও দিন দেখা কিংবা কথা বলার সৌভাগ্য হয়নি। কিন্তু তার দুই ছেলে হামিন ভাই এবং সাফিন ভাই তাদের ব্যবহারের মধ্যদিয়ে আমি বুঝতে পেরেছে কেমন মানুষ ছিলেন ফিরোজা বেগম। কতটা পান্ডিত্য ছিল তাঁর মধ্যে। তার দেহ নেই ঠিকই কিন্তু তার সৃষ্টি শত বছরেরও ম্লান হবার নয়। বরং নতুনদের কাছে ফিরোজা বেগম চলার পথে পাথেয় হয়ে থাকবেন।
এই মহান শিল্পীর প্রয়াণ সংবাদ পেয়ে প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী শ্রাবন্তি সেনও প্রায় বাকরুদ্ধ । তিনি মনে করেন এই ধরনে গুণি শিল্পী হাজার বছর পর পর জন্মায়। তার সম্পর্কে কিছু বলা ধৃষ্ঠতা ছাড়া কিছুই নয়। এমনও বরসা ছিল সেদিন- শিয়রে প্রদীপ ছিল মলিন এই গান তার কানে এখনও বাজে। এই কথা বলতে বলতে তার চোখের কোনে জল জমে যায়। পড়নের ওড়না দিয়ে চোখের জ্বল মুছতে মুছতে বললেন এমন শিল্পী সম্পর্কে মুখে নয় মন দিয়ে অনুভব করতে হয়। আজ নিরব থাকার দিন। তাকে অনুভব করার চেষ্টা করবো সারা দিন।