1. প্রচ্ছদ
2. জাতীয়

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ পরাধীনতা থেকে বাঙালি জাতির মুক্তি এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য সাধারণ ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্যদিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে উদ্ভুদ্ধ করে। তার এ ভাষণ ছিলো জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার চূড়ান্ত নির্দেশনা।

৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো। আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি..., তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকো।’

শনিবার সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। ৯৯৭১ সালের এ দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালিন রেকোর্স ময়দান) লাখ লাখ জনতার উত্তাল সমুদ্রে দাঁড়িয়ে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার এ ভাষণে শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেন। মাত্র ১৮ মিনিটের ভাষণে  

মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে দিক-নির্দেশনা দেন তিনি। তার ওই ভাষণের মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয়ে উঠে স্বাধীনতার ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার সব দিক-নির্দেশনা।

৭ মার্চের এ ভাষণের মধ্যেই স্পষ্ট ছিলো পাকিস্তানের শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্ত হতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা। পাকিস্তানের শাসন-শোষণ-নিযাতনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু এ ভাষণ দেন। গত ২০১৭ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা-ইউনেসকোর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের এ ভাষণটি বিশ্ব ঐহিত্যের (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) স্বীকৃতি দেয়।
 

বঙ্গবন্ধু এ ভাষণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযু্েদ্ধর চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করে বাঙালি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাংলার সর্বস্তরের মানুষ জীবন দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার প্রস্তুত নিতে থাকে। স্বাধীনতার জন্য অদম্য স্পৃহা নিয়ে সংগ্রামরত মুক্তিকামী জাতির আশা আকাঙ্ক্ষা বাস্তায়নে বঙ্গবন্ধু সেদিন বজ্র কণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো এবং তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। মনে রাখবা রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।’

বঙ্গবন্ধুর ওই নির্দেশের পর ছাত্র, যুবসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ বিভিন্নভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ১৯৪৭ সালে ধর্মভিত্তিক ভ্রান্ত দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে চাপিয়ে দেওয়া অসম পাকিস্তান রাস্ট্রের শাসন-শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে আসে। ধাপে ধাপে এড়িয়ে চলা বাঙালি পাকিস্তান রাষ্ট্র থেকে আলাদা হতে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। বাঙালির এ স্বাধীণতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রামরত মুক্তিগামী বাঙালি ৭ মার্চ চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে উপনিত হন। ৭ মার্চের এ ভাষণের মধ্যদিয়ে তিনি পাকিস্তানিদের শাসন-শোষণ-পীড়ন থেকে নিজেদের মুক্ত করে স্বাধীনতা অর্জনের সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর সেই নির্দেশ ও দিক-নির্দেশনাকে অনুসরণ করে বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। ২৫ মার্চের কালোরাতে বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি জাতির ওপর অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওই রাতেই গ্রেফতার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতি চূড়ান্ত বিজয় লাভ করে। এবারের এ দিবসটি পালন হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর প্রেক্ষাপটে।

মুক্তআলো২৪.কম