অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়াকে বলা হয় ‘বদলে দেওয়ার নায়ক’
মুক্তআলো ২৪.কম
মুক্ত আলো
প্রকাশিত : ১০:৪৯ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০২০ শনিবার
অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া
দেশের একজন বিশিষ্ট বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া। তিনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক এবং রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান। তিনি ২০০০ সালে ৩৭৫ শয্যাবিশিষ্ট শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালকে ৫শ’ শয্যায় উন্নীত করে মেডিকেল কলেজে রূপান্তর করার অন্যতম প্রস্তাবক এবং উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করেছেন। ২০০৩ সালে বক্ষব্যাধি বিষয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৯ সালে আমেরিকান কলেজ অব চেস্ট ফিজিসিয়ান থেকে এফসিপি ফেলোশিপ অর্জন করেন। অ্যাজমা রোগের ওষুধ প্রয়োগের ওপর পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নরত এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে গবেষণামূলক কাজেও নিয়োজিত। এছাড়াও উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন আমেরিকা, সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়েসহ বিশ্বেও প্রায় ২৫টি দেশ থেকে। অধ্যাপক ডা. উত্তম বড়ুয়া বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে সফলতা অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ বেশকিছু সম্মাননায় ভূষিত হন। তার মধ্যে ‘এপার বাংলা ওপার বাংলা মৈত্রী সম্মাননা ২০১৩’, ‘আগরতলা চিকিৎসা সম্মাননা ২০১১’, ‘অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক’ ‘মহাত্মা গান্ধী শান্তি পুরষ্কার’, ‘মাদার তেরেসা স্বর্ণ পদক’, ‘ঢাকার রত্ন সম্মাননা’ উল্লেখযোগ্য।
অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়াকে বলা হয় ‘বদলে দেওয়ার নায়ক’। কেনো বলা হয় তা জেনে নেওয়ার ইচ্ছে বহুদিন থেকে। হাসপাতালের মূল ফটকে পা রাখতেই সেই প্রশ্নের উত্তর মিলে গেলো। প্রধান সড়ক থেকে বেশ খানিকটা ভেতরে অবস্থিত হাসপাতালের ভবনগুলো। সামনের বিশাল ফাঁকা মাঠে এক সময় ছিল ময়লার ভাগাড়, সন্ধ্যার পরে চলতো অসামাজিক কার্যক্রম। নাক চেপে হাসপাতালে যেতে হতো। কিন্তু এখন সেখানে ফুলের সুবাস, ভাগাড় রূপ নিয়েছে ফুলের বাগানে। শুধু রোগীদের স্বজন নয়, স্থানীয়রাও আসছেন ঘুরতে।
সরকারি হাসপাতালের কথা উঠলেই অনেকের মনে নেতিবাচক একটা ধারণা আসে। আবর্জনার ছড়াছড়ি, নাক চেপে চলাফেরা, দালাল-হকারের দৌরাত্ম্য ইত্যাদি যেন সরকারি হাসপাতালের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এমন পরিবেশের বাইরে ছিলো না এই হাসপাতালও। তবে সরকারি হাসপাতালের এমন চিরচেনা জঞ্জালময় পরিবেশ থেকে বের হয়ে এসেছে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
এই বদলেরই নায়ক ডা. উত্তম কুমার। যিনি মনে করেন, ‘পরিচ্ছন্ন পরিবেশ’ই সেবা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে সরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে ধারণা পাল্টে দেবে।
এই পরিবর্তন কি কেবলই বাহ্যিক? তার কার্যালয়ে এমন প্রশ্নে মুচকি হাসেন ডা. উত্তম কুমার। বলেন, ‘তাহলে চলবে কেন? আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, বাংলাদেশ কেন, ভারতের উন্নত হাসপাতালের তুলনায় কোনো অংশে সেবার মান কম নয়। ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে যোগ দিতে আসা ভারতের কয়েকজন চিকিৎসক এসেছিলেন এ হাসপাতাল পরিদর্শনে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ব্যবস্থাপনা দেখে বিস্মিত হন তারা। মন্তব্য করেছিলেন, “বাংলাদেশের সরকারি কোনো হাসপাতাল এতো চমৎকার হতে পারে আমাদের ধারণাই ছিল না। ভারতের অনেক হাসপাতালও এতো চমৎকার নয়”।’
অথচ বছর কয়েক আগেও হাসপাতালটিতে ছিল দালালের দৌরাত্ম্য। আগন্তুক এলেই ঘিরে ধরতো দালালরা। বেড পাইয়ে দেওয়াসহ নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে বিভ্রান্ত করতো রোগীদের। হকারের উৎপাতও ছিল উল্লেখ করার মতো। কিন্তু সেসব এখন অতীত। দালাল তো বিতাড়িত হয়েছেই, পুরো হাসপাতালের কার্যক্রমও হয়ে গেছে গোছানো। নাকে বাজে না হাসপাতালের উৎকট গন্ধও। পরিচ্ছন্নতায় কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের চেয়ে পিছিয়ে নেই। সর্বত্রই যেনো পরিবর্তনের ছোঁয়া।
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে হলেও একসময় হাসপাতালটি কোনো আলোচনায় ছিল না। কিন্তু দিনবদলের ছোঁয়ায় পরপর দু’বার পেয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যাওয়ার্ড। সবার মুখে মুখে এখন একসময়ের অবহেলিত এই হাসপাতালটি।
এ হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভাষ্যে, যে অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে, এর সবটাই সম্ভব হয়েছে দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে। আর এর পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া। অনেক হাসপাতালের পরিচালকের দেখা মেলাভার। কিন্তু তিনি যেনো একেবারেই অন্য ধাঁচের। সকালে একবার পুরো হাসপাতাল ঘুরে গিয়ে চেম্বারে বসেন। বিকেলের দিকে কিছু সময়ের জন্য বাইরে গেলেও সন্ধ্যার পর আরেকবার এসে হাজির হন। ঠিক মতো ডাক্তাররা ডিউটি করছেন কি-না সেসব খোঁজখবর নেন।
অনেক হাসপাতালে সান্ধ্যকালীন রাউন্ডআপ ইন্টার্ন ডাক্তারদের দ্বারা চালিয়ে নেওয়া হয়। এক সময় সোহরাওয়ার্দীতেও এই চর্চা চলতো। কিন্তু অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার এসে আমূল বদলে দিয়েছেন। এখন সান্ধ্যকালীন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের ডিউটি করতে হয়। যাতে ফাঁকি দিতে না পারেন, সেজন্য সান্ধ্যকালীন পৃথক হাজিরা খাতা রয়েছে। যেখানে স্বাক্ষর করেন ডা. উত্তম কুমার নিজেও।
ডা.উত্তম কুমার বড়ুয়া ২০১৫ সালে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালকের দায়িত্ব নেন। তারপর থেকে এ প্রতিষ্ঠানে সেবার মান ও পরিবেশ উন্নয়নে প্রাণান্ত চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। মানুষের আস্থা ফেরানোর লক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দীকে ‘মডেল হাসপাতালে’ পরিণত করার পরিকল্পনায় কাজ করে চলেছেন নিরলস।
ডা.উত্তম কুমার বলছিলেন, ‘প্রায় বেশিরভাগ মানুষের ধারণা সরকারি হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা হয় না, স্টাফদের ব্যবহার ভালো না। এ কারণে প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে আস্থার সংকট প্রকট। আস্থার সংকট থাকায় দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে রোগীরা। যান্ত্রিকতা-মুক্ত মানবিক সেবা আস্থার সংকট দূর করতে পারে। এই জায়গাট বিবেচনায় আমরা অনেকটা সফল বলতে পারেন। ভিআইপিরাও এখানে চিকিৎসা নিতে আসছেন।’
‘কিছু বিশেষ সেবা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে রয়েছে, যেগুলো দেশের আর কোথাও নেই। ‘ভয়েজ ল্যাব’ সংযোজন করা হয়েছে এখানে। যাদের জন্ম থেকে কিংবা অপারেশনের কারণে স্বর উৎপন্ন হয় না, তাদের ভয়েজ ল্যাবের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই সেবা বাংলাদেশে আর কোথাও ছিল না। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) স্থাপন করা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তিতে অপরেশন ছাড়া চোখের চিকিৎসা করানো হচ্ছে সোহরাওয়ার্দীতে। অন্য জায়গায় যার খরচ পড়ছে ৫০-৬০ হাজার টাকা। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল সেই ল্যাসিক সার্জারি করাচ্ছে পুরোপুরি ফ্রি। গত এক বছরে ৩ শতাধিক রোগী এই সেবা নিয়েছেন।’
‘পায়ুপথের কিছু অপারেশন আছে। একটির নাম হচ্ছে লংগো অপারেশন। এই উন্নত চিকিৎসা দিতে সোহরাওয়ার্দীতে স্থাপন করা হয়েছে আধুনিক স্ট্যাপলিং করার যন্ত্র। বাইরে ত্রিশ হাজার টাকার মতো খরচ পড়ে। কিন্তু গরিব রোগীদের এটা এই হাসপাতালে বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। ১০ শয্যার নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চালু করা হয়েছে। একজন রোগী ভেন্টিলেশনে থাকলে দৈনিক ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। কিন্তু এখানে পাওয়া যাচ্ছে ফ্রি। ৪ শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিটও চালু করা হয়েছে।’
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালকে পূর্ণাঙ্গ মানবিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে জানিয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতা ডা. উত্তম কুমার বলেন, ‘নতুন করে আধুনিক ক্যানসার ইউনিট স্থাপনের কাজ চলছে। পুরো ইউনিট হবে সেন্ট্রাল এসি। আপাতত ৬ শয্যার ডে-কেয়ার সেন্টার থাকবে। ৫৪ বেডের এসি পেইং বেড থাকবে। পর্যায়ক্রমে সব আধুনিক সেবা সংযোজন করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা মানবিক সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনেকটাই সফল হয়েছি। রোগীর জন্য আমার রুমে সবসময় গ্রিন সিগন্যাল। পিএ-কে বলা আছে আমার সঙ্গে কথা বলতে এসে কোনো রোগী যেনো ফিরে না যায়। গ্রাম থেকে আসা সাধারণ মানুষগুলো যেনো কোনোভাবেই হতাশ না হয়।’
‘প্রধানমন্ত্রী হাসাপাতালটিকে তার পাড়ার হাসপাতাল বলে অভিহিত করেন। নেক নজরে রয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীরও। যে কারণে ৮৫০ শয্যার এ হাসপাতালটি ১৬শ শয্যায় উন্নীতকরণের কাজ চলমান। বাড়বে সেবার পরিধিও।’
ডা. উত্তম কুমার বলছিলেন, ‘হাসপাতাল সম্পর্কে মানুষ প্রত্যাশা করে- ভালো পরিবেশ, ভালো চিকিৎসা। হাসপাতালের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন থাকলে রোগীদের আগ্রহ কমে যায়, তাতে ধারণা হয় চিকিৎসা ভালো হবে না। এজন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রোগীর সেবার মান উন্নত করতে প্রথম চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় বেসরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে মানুষের যে ধারণা, আমাদের হাসপাতালের পরিবেশও তেমনভাবে করে তোলা হয়েছে। হাসপাতাল ২৪ ঘণ্টা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে। দিনে তিনবার, ক্ষেত্রবিশেষে ৫-৬ বারও পরিষ্কার করা হয়। এরইমধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় ৯০ ভাগ সফলতা অর্জন করেছি আমরা। পরিচ্ছন্নতা-কর্মীদের শুক্রবার গ্রুপ করে ছুটি কর্তন করা হয়। সেদিন আমি ব্যক্তিগতভাবে কাজের জন্য আর্থিক প্রণোদনা দেই। তারা কাজে উৎসাহ পায়। টয়লেট সবসময় পরিষ্কার রাখার জন্য সরকারি কর্মীর বাইরেও অতিরিক্ত সুইপার (ডোম) রাখা হয়েছে। চিকিৎসা সেবার মানোন্নয়নে কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট কেয়ার (কেইসি) নামে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। এ কার্যক্রমে ওয়ার্ড, ইউনিট, বিভাগ ও কেবিন নিয়ে ৪৩টি কমিটি রয়েছে। কমিটিতে ডাক্তারের নেতৃত্বে নার্স, ক্লিনাররাও সদস্য হিসেবে রয়েছেন।’
হাসপাতালের পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখতে পুরস্কার দেওয়ার কথা জানিয়ে পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘হাসপাতালকে আর্বজনামুক্ত রাখার দায়িত্ব পালন করে একটি কমিটি। প্রতিমাসে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা করা হয়। মাসে যে সেরা কাজ করে, তাকে সার্টিফিকেট ও আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়া পরিচ্ছন্নতা-কর্মীদের দুই মাস পরপর ‘বেস্ট ক্লিনার অ্যাওয়ার্ড’ও দেওয়া হয়।’
ডা. উত্তম কুমারের নেতৃত্বে এমন পরিবর্তনের বেশ ফল পাচ্ছে সোহরাওয়ার্দী। সুফল ভোগ করছে রোগীরাও। বেশিক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। অলনাইন সিস্টেম চালু হওয়ায় আর্থিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা থাকে বলে আয়ও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। সুষ্ঠু ও সুন্দর ব্যবস্থাপনার কারণে ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদক-২০১৬ ও ২০১৭’ পায় সোহরাওয়ার্দী। এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বেস্ট অ্যাওয়াডের্ও ভূষিত হয় হাসপাতালটি।
প্রকৌশলী পিতার মেজ সন্তান উত্তম কুমার বড়ুয়া। প্রয়াত পিতা যোগেন্দ্র লাল বড়ুয়ার ইচ্ছা ছিলো ছেলে উত্তম কুমারকে প্রকৌশলী বানাবেন। আর মায়ের ইচ্ছা ছেলেকে ডাক্তার বানাবেন দেশের সেবা করার জন্য। উত্তম কুমারের নিজেরও চিকিৎসা পেশার প্রতিই ঝোঁক ছিলো বেশি। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবার অকাল মৃত্যুতে তার সেই ঝোঁক আরও বাড়ে। যে কারণে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ভর্তি হয়ে এক বছর ক্লাস করার পরও মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়ে ভর্তি হয়ে যান।
ছোট বেলার অনেক সিদ্ধান্তের কারণে অনেকে আপসোস করে থাকেন। কিন্তু ডা.উত্তম কুমার মনে করেন তিনি সে সময় সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন। যে কারণে আজকে একটি মহৎ পেশায় যুক্ত হতে পেরেছেন বলে গর্ববোধ করেন।
তিনি বলেন, ‘এ পেশায় মানুষের হৃদয় স্পর্শ করা যায়। আর কোনো পেশায় এতোটা সম্ভব নয়। অনেক রোগীর সেবা করেছি, ভালো হয়ে চলে গেছে, কিন্তু তাদের সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এক মেয়ের বাবা নেই, হাসপাতাল থেকে যাওয়ার সময় আমাকে ধর্মের বাবা বলে গেছে। আমিও তাকে ঈদের জন্য গিফট পাঠাই। আবার অনেকে আমার জন্য গিফট পাঠায়। এক জীবনে এর চেয়ে কি খুব বেশি চাওয়ার থাকতে পারে?’
পেশায় চিকিৎসক হলেও উত্তম কুমারকে বহুমুখী প্রতিভাধর বলা হয়। রোগীকে সেবা দেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা পেশার উৎকর্ষতা সাধনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন তিনি। পেশাদার ডাক্তারদের শীর্ষ সংগঠন বিএমএ’তে যুগ্ম-মহাসচিব, একাধিকবার সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখনও করে যাচ্ছেন।
ডাক্তারদের নানা কারণে কেউ কেউ ‘কসাই’ বলে সম্বোধন করে থাকেন, এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ডা. উত্তম কুমারের উত্তর, ‘এটা ঠিক যে, কিছু কিছু ডাক্তারের অপেশাদার আচরণের কারণে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। তবে সেই খারাপ ডাক্তারের সংখ্যা নগণ্য। তবে খারাপটা বেশি হাইলাইট হয়, যে কারণে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। আমি জোর দিয়েই বলতে পারি পরিস্থিতি অনেক বদলে যাচ্ছে। আমরা পেশাজীবী সংগঠনগুলো থেকেই নানা রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। ইতিবাচক জনমত তৈরির জন্য মিডিয়ার ভূমিকা জরুরি।’
নিজেকে আজন্ম বঙ্গবন্ধুর সৈনিক পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। স্কুল জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি তার। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। যখন যেখানে থেকেছেন সেখান থেকেই লালিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছেন।
তৎকালীন সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৯৯৫ সালে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ প্রতিষ্ঠায় অন্যতম ভূমিকা পালন করেন। জন্মস্থান রাউজানের জন্য তার মন ব্যাকুল থাকে সবসময়।। সুযোগ পেলেই ছুটে যান এলাকাবাসীর পাশে। সঙ্গে থাকার চেষ্টা করেন এলাকাবাসীর বিপদে-আপদে। এলাকাবাসীও তাকে আপন লোক বলে মনে করে। যে কারণে বিপদে-আপদে তার কাছেই ছুটে আসেন পরম আশ্রয় ভেবে।
™তথ্য সংগ্রহ - দিপানন্দ ভিক্ষু, দেশের সবোর্চ্চ উচ্চতর ডিগ্রি গবেষণারত (আইন, সরকার ও রাজনীতি)।
মুক্তআলো২৪.কম