নেপথ্যে থেকে যাওয়া কিছু রহস্য মনিকার মুখ খোলার গল্প!
অনলাইন ডেস্ক
মুক্তআলো২৪.কম
প্রকাশিত : ০১:৫৩ এএম, ২০ মে ২০১৪ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৬:১৩ এএম, ২৩ মে ২০১৪ শুক্রবার
মনিকা লিউনস্কি।
দীর্ঘ নীরবতা ভেঙে হোয়াইট হাউসের আলোচিত সেই ইন্টার্ন অর্থাৎ কিনা শিক্ষানিবশ কর্মী বলেছেন, যা হয়েছে, তাঁর জন্য তিনি খুবই দুঃখিত।বিল ক্লিনটনের সঙ্গে প্রেম নিয়ে ঝাড়া এক দশক পর মুখ খুললেন মনিকা লিউনস্কি। কথাটায় জোর দেওয়ার জন্য ঠিক এভাবে একটা করে শব্দ আলাদা করে লিখেছেন তিনি: আই। মাইসেলফ। ডিপলি রিগ্রেট। হোয়াট। হ্যাপেন্ড। জনপ্রিয় সাময়িকী ভ্যানিটি ফেয়ার-এ নিজের জবানে পাক্কা চার হাজার শব্দের কাহিনি লিখেছেন মনিকা লিউনস্কি।
ক্ষমতাবান প্রেসিডেন্টকে বাঁচানোর জন্য প্রশাসন, উভয় পক্ষের রাজনৈতিক নেতৃত্ব আর মিডিয়াসহ সবাই বলির পাঁঠা করেছিল অবলা এই তরুণীকেই। তবে এখন তিক্ত অতীত ভুলে সামনে এগিয়ে যেতে চান তিনি। অন্যকেও আটকে রাখতে চান না সেই কালো অধ্যায়ের ছায়ায়।মনিকা এতে বলেছেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন তাঁর কাছ থেকে সুযোগ নিয়েছিলেন। তবে একই সঙ্গে বলেছেন, যা হওয়ার তা হয়েছে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সম্মতিতেই। অন্যায় তাঁর সঙ্গে যা হয়েছে, তা ঘটনার পর। এই ‘অন্য’ মানুষটি, বলাই বাহুল্য, রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন।চল্লিশে পা দিয়েও আকর্ষণীয় মনিকা লিখেছেন, একটা দশক তিনি এতটাই নীরব ছিলেন যে অনেকেই মনে করেছিল বিল ক্লিনটন ও তাঁর স্ত্রী হিলারি টাকা দিয়ে তাঁর মুখ বন্ধ করেছেন। আপনাদের নিশ্চিত করে বলতে পারি, এর চেয়ে সত্যের অপলাপ আর হয় না।’
শপথ নিয়ে মিথ্যা বলার দায়ে অভিসংশনের মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। কোনোমতে গদি রক্ষা পায়।বিবাহিত প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তুমুল শরীরী প্রেমের কথা ফাঁস হয়ে গেলে যে বদনাম মনিকার ভাগ্যে জোটে, তা তাঁর জীবনের পথটাই বদলে দেয়। অন্যদিকে, চূড়ান্ত হেনস্তা হতে হয় এমনিতে বেশ জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকেও। ‘মনিকা লিউনস্কি নামের এই নারীর সঙ্গে আমার কোনো প্রেমট্রেম নেই’—তদন্তে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে এ রকম একটি ডাহা মিথ্যা বলেছিলেন বিল ক্লিনটন। পরে তাঁকে মিথ্যা কথার জন্য দুঃখ প্রকাশও করতে হয়েছে। তদন্তে মনিকা-ক্লিনটন প্রেমলীলার যে বিবরণ উঠে এসেছিল, তা শুনলে যেকোনো ভদ্রলোকেরই গালের রং বদলে যাবে।
হিলারি ক্লিনটন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে সামাজিক মনোবিদ্যায় মাস্টার্স করার পর লস অ্যাঞ্জেলেস, নিউইয়র্ক ও পোর্টল্যান্ডসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে বেশুমার ।মনিকাচাকরির সাক্ষাৎকার দিয়েছেন । বিশেষ করে যোগাযোগ ও ব্র্যান্ডিং খাতে চাকরির চেষ্টা করেছেন। জোর দিয়েছিলেন দাতব্য কর্মসূচির ওপর। কিন্তু ‘অতীত রেকর্ডের’ জন্য ওই সব প্রতিষ্ঠানের কর্তারা তাঁকে চাকরি দিতে রাজি হননি। ঠারেঠোরে বুঝিয়েছেন, মনিকা ওই পদের জন্য উপযুক্ত নন।কিন্তু এত দিন পর নিজের দুর্ভোগের কাহিনির ঝাঁপি খুলে বসলেন কেন মনিকা? ভ্যানিটি ফেয়ার-এ তিনি নিজে যা বলেছেন, তার মোদ্দাকথা হলো: ২০১০ সালে সমকামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র টাইলার ক্লেমেন্টির আত্মহত্যাই তাঁকে এ সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করে। আরেক তরুণকে টাইলারের চুমু খাওয়ার একান্ত ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। লজ্জায়-ক্ষোভে আত্মহত্যা করেন ক্লেমেন্টি।
বেচারির নাওয়া-খাওয়া মাথায় ওঠে। রাতের পর রাত বিপর্যস্ত মনিকার বিছানার পাশে থেকে সঙ্গ দিয়েছেন তাঁর মা। দেশজুড়ে চলা গালমন্দে জর্জরিত মেয়ে নিজের জীবনের ইতি টানতে পারে—এ আতঙ্ক পেয়ে বসেছিল মাকে। মনিকা বলেন, তিনি এ নিয়ে সত্যি সত্যি কখনো আত্মহত্যার চেষ্টা করেননি, তবে তদন্তের সময় এবং তার পরে দু-একবার আত্মহত্যার ঝোঁক চেপেছিল তাঁর মাথায়।মনিকা লিখেছেন, বিল ক্লিনটনের সঙ্গে শারীরিক প্রেমের ওই ঘটনা ফাঁসের পর তাঁর মায়ের অবস্থা নাকি রীতিমতো সঙিন হয়ে ওঠে।
লিখেছেন, ‘টাইলার ক্লেমেন্টির মর্মান্তিক ঘটনার পর নিজের দুর্ভোগের অর্থ আমার নিজের কাছেই বদলে গেল। মনে হলো, নিজের ঘটনা সবার কাছে খুলে বলে আমি হয়তো চরম অপমানের অতলে নিমজ্জিত অন্যদের সাহায্য করতে পারব।’ এখন অনলাইন অবমাননা ও হয়রানির শিকারদের জন্য কাজ করতে চান তিনি।কিন্তু মনিকার হঠাৎ মুখ খোলার বিষয়টা এত সোজাসাপ্টা তা মানতে রাজি নন অনেকেই। একজন কলামিস্ট বলেছেন, মিডিয়ার অতীত বাড়াবাড়ির স্মৃতিচারণা বা নিছক ‘নীরবতা ভাঙা’ মনিকা লিউনস্কির হঠাৎ পুরোনো কাসুন্দি ঘাঁটা আসল কারণ নয়। কারণ, তিনি ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে একটি বই লেখায় সাহায্য করেছেন। ভূমিকা রেখেছেন একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণেও। আর সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কত, তার ইয়ত্তা নেই।
বিল ক্লিনটনের স্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ার পরিকল্পনায় জল ঢালা। সম্ভাব্য এক রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ইতিমধ্যেই ক্লিনটন-মনিকা কেচ্ছাকে হিলারির অতীতে একটি কলঙ্ক চিহ্ন বলে আখ্যা দিয়েছেন। মনিকার এভাবে নতুন করে সামনে আসা হিলারির জন্য শাপে বর হতে পারে, এমনও বলছেন কেউ কেউ। তবে এ পর্যন্ত এর বিপরীত মতই বেশি। তাহলে আসল নেপথ্য কারণটা কী? অন্তত মিডিয়ার মতে, আসল কাহিনি হচ্ছে এটাই ?