মুশফিকের সেঞ্চুরির পর সাকিব-তাইজুলের স্পিন ভেল্কিতে জয়ের স্বপ্ন

মুক্তআলো২৪.কম

মুক্ত আলো

প্রকাশিত : ০৭:৩২ পিএম, ৫ এপ্রিল ২০২৩ বুধবার

মুশফিকের সেঞ্চুরির পর সাকিব-তাইজুলের স্পিন ভেল্কিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশে

মুশফিকের সেঞ্চুরির পর সাকিব-তাইজুলের স্পিন ভেল্কিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশে


মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরির পর শেষ বিকেলে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলামের স্পিন ভেল্কিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় দিন শেষেই ঢাকা টেস্ট  জয়ের স্বপ্ন দেখছে স্বাগতিক বাংলাদেশ।

প্রথম ইনিংসে আয়ারল্যান্ডের ২১৪ রানের জবাবে  মুশফিকের সেঞ্চুরিতে(১২৬)সব উইকেট হারিয়ে ৩৬৯ রান করে বাংলাদেশ। এতে প্রথম ইনিংস থেকে ১৫৫ রানের লিড পায় টাইগাররা। পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে দ্বিতীয় দিন শেষে ৪ উইকেটে ২৭ রান করেছে আয়ারল্যান্ড। ৬ উইকেট হাতে নিয়ে ১২৮ রানে পিছিয়ে আইরিশরা। 
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম দিনই ২১৪ রানে গুটিয়ে যায় আয়ারল্যান্ড। জবাবে দিন শেষে ২ উইকেটে ৩৪ রান করেছিলো বাংলাদেশ। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে ১৮০ রানে পিছিয়ে ছিলো টাইগাররা। বাংলাদেশের তামিম ২১ ও নাজমুল হোসেন শান্ত শূন্যতে ফিরেন। ১২ রানে অপরাজিত ছিলেন মোমিনুল হক।
দ্বিতীয় দিনের প্রথম বলেই বাউন্ডারি হাঁকান মোমিনুল। কিন্তু নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। দিনের তৃতীয় ওভারেই মোমিনুলকে ১৭ রানে বোল্ড করেন পেসার মার্ক অ্যাডায়ার। ৩৪ বল খেলে ৪টি চার মারেন মোমিনুল।
৪০ রানে তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে মোমিনুলের বিদায়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। দলকে চাপ মুক্ত করতে আয়ারল্যান্ডের বোলারদের উপর চড়াও হন উইকেটে নতুন ব্যাটার সাকিব। মুশফিকের সাথে জুটির শুরু থেকেই ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট করেন সাকিব। এতে ৫৪ বলেই জুটিতে ৫০ রান উঠে যায়। মারমুখী ব্যাটিং অব্যাহত রেখে ৪৫ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ৩১তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান সাকিব।
৩১তম ওভারে ১০৯ বলে জুটিতে ১শ পূর্ণ করেন মুশফিক-সাকিব। এই নিয়ে পঞ্চমবারের মত জুটিতে ১শ করলেন মুশফিক ও সাকিব। জুটিতে সর্বোচ্চ পাঁচবার সেঞ্চুরি করেছেন হাবিবুল বাশার ও জাভেদ ওমরও। সাকিব-মুশফিক ৬৫তম ইনিংসে ও হাবিবুল-জাভেদ ৩২ ইনিংসে পাঁচবার সেঞ্চুরির জুটি গড়েন।
দ্রুত রান তুলতে না পারলেও, সাকিবকে দারুণভাবে সঙ্গ দিয়ে ৬৯ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারে ২৬তম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান মুশফিক। দারুন ব্যাটিং অপরাজিত থেকেই প্রথম সেশন শেষ করেন মুশফিক ও সাকিব।
বিরতির পর দ্বিতীয় সেশনের সপ্তম ওভারে হতাশায় পুড়তে হয় সাকিবকে। অফ-স্পিনার অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সাকিব। ১৪টি চারে ৯৪ বলে ৮৭ রান করেন টাইগার দলপতি। চতুর্থ উইকেটে ১৮৮ বলে ১৫৯ রান যোগ করেন সাকিব-মুশফিক।
দলীয় ১৯৯ রানে সাকিবের বিদায়ে ক্রিজে মুশফিকের সঙ্গী হন লিটন দাস। উইকেটে এসেই দ্রুত রান তুলেন লিটন। সাথে রানের গতি বাড়ান মুশফিকও। ৫৬ বলে জুটিতে অর্ধশতক পূর্ণ করেন তারা।
৫৫তম ওভারে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১০ম সেঞ্চুরির তুলে নেন মুশফিক। এজন্য ১৩৫ বল খেলেন মুশি। এই ইনিংসের মাধ্যমে টেস্ট ক্রিকেটে  তামিম ইকবালের সাথে  যৌথভাবে সর্বোচ্চ  সেঞ্চুরির  মালিক হন  মুশফিক।
হাফ-সেঞ্চুরি সম্ভাবনা জাগিয়ে ৪১ বলে ৮টি চারে ৪৩ রান করে আউট হন লিটন। মুশফিকের সাথে ৮৪ বলে ৮৭ রান যোগ করেন লিটন।
লিটনের বিদায়ে মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে বাংলাদেশের স্কোর ৩শ ও লিডকে ১শ পার করেন মুশফিক। ৬৮তম ওভারে ম্যাকব্রিনকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে মারে কমিন্সকে ক্যাচ দেন মুশফিক। ১৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৬৬ বলে ১২৬ রান করেন মুশি।
দলীয় ৩৩১ রানে ষষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে মুশফিক আউটের পর বাংলাদেশের লোয়ার-অর্ডারে ধ্বস নামান ম্যাকব্রিন। তাইজুল ইসলাম-শরিফুল ইসলামকে ৪ রান করে এবং এবাদতকে খালি হাতে ফেরান ম্যাকব্রিন। ৩৫৪ রানে নবম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
শেষ ব্যাটার খালেদ আহমেদকে নিয়ে টেস্টে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি তুলেন মিরাজ। স্পিনার বেন হোয়াইটের বলে মিরাজের আউটে ৮০ দশমিক ৩ ওভারে ৩৬৯ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ৮০ বলে ৫৫ রান করেন মিরাজ। ৪ রানে অপরাজিত থাকেন খালেদ।
বল হাতে ২৮ ওভারে ১১৮ রানে ৬ উইকেট নেন ম্যাকব্রিন। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্টে এসে প্রথমবারের মত ইনিংসে ৬ উইকেট নিলেন তিনি। এছাড়া মার্ক অ্যাডায়ার-বেন হোয়াইট ২টি করে উইকেট নেন।
প্রথম ইনিংসে ১৫৫ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেই মহাবিপদে পড়ে আয়ারল্যান্ড। সাকিব-তাইজুলের ঘুর্ণিতে ১৩ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারায় তারা। প্রথম ওভারেই আইরিশ ওপেনার জেমস ম্যাককলামকে খালি হাতে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন সাকিব। আরেক ওপেনার মারে কমিন্সকে ১ রানের বেশি করতে দেননি তাইজুল। অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বলবির্নিকে ৩ রানে বোল্ড করেন তাইজুল। কার্টিস ক্যাম্ফারকে ১ রানে থামান সাকিব।
পঞ্চম উইকেটে ১৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দিন শেষ করেছেন হ্যারি টেক্টর ও পিটার মুর। টেক্টর ৮ ও মুর ১০ রানে অপরাজিত আছেন। সাকিব ১১ রানে ও তাইজুল ৭ রানে ২টি করে উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড :
আয়ারল্যান্ড প্রথম ইনিংস (২১৪/১০, ৭৭.২ ওভার)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস (আগের দিন- ৩৪/২, ১০ ওভার, মোমিনুল ১২*) :
তামিম ইকবাল ক অ্যাডায়ার ব ম্যাকব্রিন ২১
নাজমুল হোসেন শান্ত
মোমিনুল হক বোল্ড অ্যাডায়ার ১৭
মুশফিকুর রহিম ক কমিন্স ব ম্যাকব্রিন ১২৬
সাকিব আল হাসান ক টাকার ব ম্যাকব্রিন ৮৭
লিটন দাস ক টেক্টর ব হোয়াইট ৪৩
মেহেদি হাসান মিরাজ স্টাম্প টাকার ব হোয়াইট ৫৫
তাইজুল ইসলাম বোল্ড ম্যাকব্রিন ৪
শরিফুল ইসলাম এলবিডব্লু ব ম্যাকব্রিন ০
খালেদ আহমেদ অপরাজিত
অতিরিক্ত (লে বা-৪, নো-২, ও-২) ৮
মোট (অলআউট, ৮০.৩ ওভার) ৩৬৯
উইকেট পতন : ১/২ (শান্ত), ২/৩৪ (তামিম), ৩/৪০ (মোমিনুল), ৪/১৯৯ (সাকিব), ৫/২৮৬ (লিটন), ৬/৩৩১ (মুশফিক), ৭/৩৩৭ (তাইজুল), ৮/৩৪৮ (শরিফুল), ৯/৩৫৪ (এবাদত), ১০/৩৬৯ (মিরাজ)।
আয়ারল্যান্ড বোলিং :
মার্ক অ্যাডায়ার : ১৭-২-৬৪-২ (ও-২, নো-২),
হুম : ১১-২-৩৭-০,
ম্যাকব্রিন : ২৮-২-১১৮-৬,
ক্যাম্ফার : ৮-১-৫৪-০,
হোয়াইট : ১৩.৩-০-৭১-২,
টেক্টর : ৩-০-২১-০।
আয়ারল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস :
মারে কমিন্স এলবিডব্লু ব তাইজুল ১
জেমস ম্যাককোলাম এলবিডব্লু ব সাকিব ০
অ্যান্ড্রু বলবির্নি বোল্ড ব তাইজুল ৩
হ্যারি টেক্টর অপরাজিত ৮
কার্টিস ক্যাম্ফার ক লিটন ব সাকিব ১
পিটার মুর অপরাজিত ১০
অতিরিক্ত (বা-৪) ৪
মোট (৪ উইকেট, ১৭ ওভার) ২৭
উইকেট পতন : ১/১ (ম্যাককোলাম), ২/৭ (কমিন্স), ৩/৮ (বলবির্নি), ৪/১৩ (ক্যাম্ফার)।
বাংলাদেশ বোলিং :
সাকিব : ৭-২-১১-২।
তাইজুল : ৭-৪-৭-২,
মিরাজ : ২-১-১-০,
এবাদত : ১-০-৪-০।





মুক্তআলো২৪.কম