ঢাকা, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫ || ১৪ মাঘ ১৪৩১
Breaking:
বৈঠক শেষে ফখরুল ১০ বিষয়ে একমত বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন     
Mukto Alo24 :: মুক্ত আলোর পথে সত্যের সন্ধানে
সর্বশেষ:
  ট্রাম্পের হুঙ্কারে পিছু হটলেন গুস্তাভো পেট্রো        নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করলেন ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা        ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকছে না সাত কলেজ     
২২৭৬

নিম্নমুখী শেয়ারবাজার বাজেটকে ঘিরে

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২ জুলাই ২০১৪   আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৪

প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পাঁচ দিনের গড় লেনদেন ২০০ কোটির নিচে নেমে এসেছে।
টানা আট দিন সূচকের পতন হয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। সেই সঙ্গে লেনদেনও কমছে আশঙ্কাজনক হারে। গত সপ্তাহের পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে সবদিনই সূচক কমেছে। অব্যাহত সূচকের পতন ও লেনদেন কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশিদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘টানা সূচক ও লেনদেন কমায় বিনিয়োগকারীরা হতাশ হবেন, এটাই স্বাভাবিক। কেননা প্রতিদিনই মূলধন হারাতে হচ্ছে তাঁদের। এ ছাড়া অনেকে আতঙ্কিত হয়ে নিজের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছেন অনেকে।’ বাজারের এ অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক ও বড় বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

গত ৫ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বাজেটে বিনিয়োগকারীদের অর্জিত মুনাফায় করারোপের প্রস্তাব করা হয়। যদিও পরে চূড়ান্ত বাজেট থেকে ওই কর প্রত্যাহার করা হয়। মূলত বাজেটকে ঘিরেই শেয়ারবাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা শুরু হয়, যার রেশ এখনো চলছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, প্রথমত, বাজেটকে ঘিরে করপোরেট করের ব্যাপারে করপোরেট ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছিল যে সরকার ব্যাংক ও আর্থিক খাতের কোম্পানিগুলোর কর হার ৪২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে হয়তো কমাবে। কিন্তু বাজেটে সেটা কমানো হয়নি।

মিজানুর রহমানের মতে, দ্বিতীয় বিষয় হলো, বাজেটে এবারও জিডিপির ৩ দশমিক ৫ শতাংশ ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা আছে ব্যাংকিং খাত থেকে। এই ঋণ বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে সংকুচিত করবে। এটা হলে বেসরকারি খাতের মুনাফা এবং তাদের ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হবে না। এই দুটি সিদ্ধান্ত শেয়ারবাজারের জন্য নেতিবাচক হয়েছে। এর কারণে বিনিয়োগকারীরা যে বার্তা পেয়েছেন তা হলো, এই বছরের বেসরকারি খাতের ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে না। যে কারণে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে।

এর বাইরে দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সমস্যা অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত এক থেকে দুই বছরে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে যে কোম্পানিগুলো এসেছে সেগুলো নিয়ে বাজারে গুজব আছে, আইপিওগুলোর যথার্থ মূল্যায়ন হয়নি। অনেকগুলোর ক্ষেত্রে অতি মূল্যায়ন হয়েছে। সেগুলো বাজারে তাদের দাম ধরে রাখতে পারছে না। এগুলো মার্কেটে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারছে না। যাঁরা এসব কোম্পানির শেয়ার কিনছেন, তাঁদের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষকের মতে, দীর্ঘমেয়াদি কারণের মধ্যে সুশাসনের গুণগত কোনো পরিবর্তন না আসা অন্যতম কারণ। সুশাসনের অভাবে যথাযথ বাজার তদারকি না হওয়ায় কারসাজিও চিহ্নিতও করা যাচ্ছে না। বাজারের বর্তমান অবস্থায় সুশাসনের সঙ্গে যাঁরা সংশ্লিষ্ট, তাঁদের আরও যথাযথ ভূমিকা জরুরি বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়া আইপিওতে যে সব কোম্পানি আসছে সে সব কোম্পানির যথাযথ মূল্য নির্ধারণ। বাজারে সিরিয়াল লেনদেনের বিষয়ে বিশেষ করে কারসাজি রোধে যথাযথ সার্ভিল্যান্স ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে বিনিয়োগকারীদের মুনাফায় করারোপ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা নড়বড়ে হয়ে যায়। এবার এটা আরোপ না হলেও আগামীতে আরোপ করা হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। তারই নেতিবাচক প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে।

অন্যদিকে আইপিও, রাইট ও বোনাস শেয়ার ছাড়ার ফলে বিনিয়োগকারীদের টাকা আটকে যাচ্ছে। এতে সেকেন্ডারি বাজারে অর্থ প্রবাহ কমে যাচ্ছে। আর অব্যাহত দরপতনের কারণ তো আছেই। তাঁর মতে, অব্যাহত দরপতনের কারণে বিনিয়োগকারীদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় তাঁরা নতুন করে বিনিয়োগে যেতে পারছেন না।

এ ক্ষেত্রে নতুন কোম্পানি আনতে আইপিওর যৌক্তিকতা আছে কি না, আইপিওর মাধ্যমে আসা কোম্পানির দাম যৌক্তিক কি না, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে বলে মনে করেন ডিএসইর এই পরিচালক। এ ছাড়া আইপিও মানসম্মত কি না, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে বলে পরামর্শ দেন তিনি। অন্যদিকে ভালো মানের আইপিও আনতে ব্যর্থ ইস্যু ব্যবস্থাপক কোম্পানিকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন তিনি।


সাপ্তাহিকবাজারপরিস্থিতি: গত সপ্তাহে ডিএসইর ডিএসইএক্স সূচক ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ বা ৭৩ দশমিক ১২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৪৩৬৩ পয়েন্টে। এই সময়ে ডিএসইর লেনদেন কমেছে ২৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন লেনদেন হয়েছে ১৯২ কোটি টাকা।

শেয়ার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত