ঢাকা, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪ || ১০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
Breaking:
শপথ নিলেন সিইসিসহ চার নির্বাচন কমিশনার     
Mukto Alo24 :: মুক্ত আলোর পথে সত্যের সন্ধানে
সর্বশেষ:
  চীনা ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান বিডার        ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের কর্মসূচি স্থগিত        অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : সিইসি        এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে ড. ইউনূসের `থ্রি জিরো তত্ত্ব`     
৭০

মার্কিন নির্বাচন: ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ পদ্ধতি কী এবং কীভাবে কাজ করে

মুক্তআলো২৪.কম

প্রকাশিত: ১ নভেম্বর ২০২৪  

মার্কিন নির্বাচন: ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ পদ্ধতি কী এবং কীভাবে কাজ করে

মার্কিন নির্বাচন: ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ পদ্ধতি কী এবং কীভাবে কাজ করে


মার্কিন প্রেসিডেন্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নির্বাচিত হন না, ইলেক্টোরাল কলেজ নামে একটি ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচিত হন। কিন্তু কী এই ইলেক্টোরাল কলেজ? এটা কিভাবে কাজ করে?

অনেকের কাছেই ইলেক্টোরাল কলেজ একটি জটিল বিষয় মনে হতে পারে। এমনকি অনেক মার্কিন নাগরিকও এই বিষয়টিকে সহজে বুঝে উঠতে পারেন না। চলুন একটু ভালো করে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করে দেখা যাক।

কেন মার্কিন এই ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নিয়েছে?

১৭৮৭ সালে মার্কিন সংবিধান প্রণেতারা এই পদ্ধতি চালু করেন। ব্রিটেন থেকে যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা পাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ছিল একটি একেবারে নতুন একটি দেশ। 
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফাউন্ডিং ফাদার্স হিসাবে পরিচিত ব্যক্তিরা এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন যা ক্ষমতাকে একজনের হাতে কেন্দ্রীভূত করবে না। রাজতন্ত্রের মতো কাঠামো তৈরি করতে পারে এমন ব্যবস্থা থেকে তারা নিজেদেরকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু সম্পূর্ণরূপে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হওয়ার ধারণাটি এই ইলেক্টোরাল ব্যবস্থার ফলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এই ব্যবস্থার প্রণয়নকারীরা উদ্বিগ্ন ছিলেন যে ভোটাররা যথেষ্ট জানাশোনার মাধ্যমে ভোটের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য যথেষ্ট শিক্ষিত কিনা। তখন জাতীয় সাক্ষরতার হার কম ছিল এবং সেই সময়ে অন্য কোন দেশই জনপ্রিয় ভোটের মাধ্যমে নেতাদের বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেননি।

জনগণের সরাসরি ভোটের এবং একক কারো হাতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মধ্যবর্তী একটি পন্থা হিসাবে বেছে নেয়া হয় এই ইলেক্টোরাল কলেজকে। তাই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে প্রতিটি রাজ্যে নিযুক্ত ইলেক্টররাই রাষ্ট্রপতিকে ভোট দিবেন।
 

ইলেক্টোরাল কলেজ কিভাবে কাজ করে?

তাত্ত্বিকভাবে, মার্কিন সরকার সমন্বিত নির্বাহী বিভাগ (রাষ্ট্রপতি এবং মন্ত্রিসভা), বিচার বিভাগীয় বিভাগ (সুপ্রিম কোর্ট) এবং আইন প্রণয়ন বিভাগ (কংগ্রেস) নিয়ে গঠিত। কংগ্রেস আবার গঠিত দুটি সত্তা নিয়ে- হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস এবং সিনেট।

সিনেটে প্রতিটি রাজ্যের দুজন করে সদস্য থাকেন। তারা ফেডারেল স্তরে সমগ্র রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করেন। হাউজের প্রতিনিধিরা একটি রাজ্যের মধ্যে পৃথক জেলার প্রতিনিধিত্ব করেন।

একটি রাজ্যের কংগ্রেসের কতজন প্রতিনিধি থাকবেন, সেটা আদমশুমারির মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। দেশটিতে ১০ বছর পরপর আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হয়।

ক্যালিফোর্নিয়া হল সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ রাজ্য, তাই এর প্রতিনিধির সংখ্যাও সর্বোচ্চ- ৫২। অপেক্ষাকৃত ছোট জনসংখ্যার রাজ্য, যেমন আলাস্কায়, কংগ্রেসের প্রতিনিধি মাত্র একজন। 

প্রতিটি মার্কিন রাজ্য তার কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলের প্রত্যেক সদস্যের জন্য একটি ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট পায়। এর মানে, ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৪টি ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট রয়েছে - ৫২টি হাউজ প্রতিনিধিদের জন্য এবং দুটি সিনেটরদের জন্য।
 

আলাস্কার রয়েছে তিনটি ভোট, একটি তার হাউজ প্রতিনিধির জন্য এবং দুটি সিনেটরদের জন্য।

সব মিলিয়ে, কংগ্রেসের ৫৩৫ জন সদস্য রয়েছেন এবং ওয়াশিংটন ডি সি তে রয়েছেন তিনজন নির্বাচক। অর্থাৎ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে - নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য প্রয়োজন এর অধিকাংশ- অন্তত ২৭০টি৷

অ্যামেরিকানরা তাহলে কাকে ভোট দেন?

মার্কিন নাগরিকরা যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেন, তখন তারা আসলে সেই প্রার্থীর ইলেক্টরদেন ভোট দেন। বেশিরভাগ রাজ্যে কোনো প্রার্থী সাধারণ জনগণের ভোটে জয়ী হলে পুরো রাজ্যের ইলেক্টরদের ভোট পান। উদাহরণস্বরূপ, ক্যালিফোর্নিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে কমলা হ্যারিস বিজয়ী হলে তিনি সে রাজ্যের ৫৪টি ইলেক্টোরাল ভোটই পাবেন।

মাইন এবং নেব্রাস্কাতে অবশ্য পদ্ধতি ভিন্ন। এই দুই রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচিত প্রার্থীকেই সব ভোট দেয়া হয় না। এই দুই রাজ্যে জনগণের ভোটের হারের ওপর ভিত্তি করে ইলেক্টোরাল ভোটও প্রার্থীদের মধ্যে ভাগ করা হয়।

এমন কোন সাংবিধানিক আইন নেই যেখানে রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাওয়া প্রার্থীকেই ভোট দিতে ইলেক্টোরাল ভোটাররা বাধ্য। তবে রাজ্যের ভোটারদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট দেওয়া একেবারেই বিরল। ইউএস অফিস অফ ফেডারেল রেজিস্ট্রার অনুসারে, মার্কিন ইতিহাসে "৯৯ শতাংশেরও বেশি ইলেক্টোরাল ভোটাররা তাদের অঙ্গীকার অনুযায়ীই ভোট দিয়ে এসেছেন"।
 

জনপ্রিয় ভোটে হেরেও কি কেউ প্রেসিডেন্ট হতে পারেন?

হ্যাঁ। মার্কিন ইতিহাসে পাঁচবার এমন ঘটনা ঘটেছে। ২০১৬ সালে ডনাল্ড ট্রাম্প জনপ্রিয় ভোটে প্রায় ৩০ লাখ ভোটে পিছিয়ে থাকলেও ইলেক্টোরাল কলেজে জিতেছিলেন। জর্জ ডাব্লিউ বুশ জনপ্রিয় ভোটে হেরে গেলেও ২০০০ সালে আল গোরের বিরুদ্ধে ইলেক্টোরাল কলেজে জয়ী হন। ১৮শ শতকেও এমন ঘটনা তিনবার ঘটেছিল। 

কোন প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে কী হবে?

দুই প্রার্থীই ২৬৯টি করে ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট পেয়েছেন, এমন ঘটনা ঘটলে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসকে বিজয়ী নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিটি রাজ্য প্রতিনিধি একটি ভোট পায় এবং জয়ের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ (২৬) ভোট প্রয়োজন হয়। মার্কিন নির্বাচনের ইতিহাসে অবশ্য কখনই ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে দুই প্রার্থীর সমান সমান ভোট পাওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
 

বিজয়ী কখন ঘোষণা করা হয়?

কংগ্রেস ৬ জানুয়ারি ভোট গণনা করে এবং ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের দিন ফলাফল আসার সময়ই সাধারণত বিজয়ী কে, সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। ফলে ৬ জানুয়ারির ঘোষণাতে সাধারণত আনুষ্ঠানিকতাতেই পর্যবসিত হয়।

তবে ভোট গণনা করতে কিছুক্ষেত্রে বাড়তি সময়ও লাগতে পারে। ২০০০ সালে জো বাইডেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় ৭ নভেম্বর, নির্বাচনের দিন ৩ নভেম্বরের চার দিন পর।

সুইং স্টেট কী? কেন তারা গুরুত্বপূর্ণ?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ রাজ্য বছরের পর বছর একই দলকে ভোট দিয়ে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯২ সাল থেকেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্যালিফোর্নিয়ায় ডেমোক্র্যাটরা জিতে এসেছে। ১৯৮০ সাল থেকে মিসিসিপি জিতেছে রিপাবলিকানরা।

অন্যদিকে সুইং রাজ্যগুলো কখনও ডেমোক্র্যাট, কখনও রিপাবলিকান প্রার্থীদের নির্বাচিত করে। এই রাজ্যগুলোতে প্রার্থীরা ভোটের জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালান, কারণ এই রাজ্যগুলোই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করতে ভূমিকা রাখে।

মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলেছেন, এই বছরের মূল নির্বাচনী লড়াই হবে অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, নেভাদা, পেনসিলভানিয়া, উত্তর ক্যারোলিনা, উইসকনসিন এবং মিশিগানে।
২০২৪ সালে মার্কিনিরা আর কোন কোন ভোট দিচ্ছেন?

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন রয়েছে এ বছর। ৫ নভেম্বর সিনেট এবং হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের সদস্য নির্বাচনে ভোট হবে। সিনেটে ৩৩টি এবং হাউজে ৪৩৫টি, মোট ৪৬৮টি আসনে লড়াই হবে৷

অনেক রাজ্যে ৫ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পাশাপাশি রাজ্যের আরো নানা স্তরের নির্বাচনেও ভোট দিবেন। ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের ওপর নির্ভর করে ইস্যুও আলাদা হবে। নভেম্বর মাসে বেশ কয়েকটি রাজ্যের ব্যালটে সবচেয়ে বড় এবং রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত বিষয়গুলির একটি হিসাবে গর্ভপাতের অধিকারটিও থাকবে।সূত্র:অনলাইন,ইত্তেফাক।









মুক্তআলো২৪.কম

 
 
আরও পড়ুন
জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত