ঢাকা, ২১ নভেম্বর, ২০২৪ || ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১
Breaking:
সশস্ত্র বাহিনী দিবস: শিখা অনির্বাণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা     
Mukto Alo24 :: মুক্ত আলোর পথে সত্যের সন্ধানে
সর্বশেষ:
  বাংলাদেশ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায় : প্রধান উপদেষ্টা        জঞ্জাল পরিষ্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিন : মির্জা ফখরুল        শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশে সহায়ক শিক্ষাব্যবস্থা দরকার : ড. মুহাম্মদ ইউনূস     
২৭৫২

১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পল্টনের সমাবেশে অসহযোগের ডাকদিলেন বঙ্গবন্ধু

মুক্তআলো২৪.কম

প্রকাশিত: ৩ মার্চ ২০২০  

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান


১৯৭১ সালের ৩ মার্চ। এই দিন ঢাকা ছিল প্রতিরোধের নগরী, ঘোষিত হয় স্বাধীনতা সংগ্রামের রূপরেখা। পল্টনে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত বিশাল সমাবেশ থেকে অসহযোগের ডাক দিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেখানে পাঠ করা হয় স্বাধীনতার ইশতেহার। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সমস্ত আনুষ্ঠানিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।


এই দিনেই নির্ধারণ করা হয় সাড়ে সাত কোটি মানুষের স্বপ্নের লালিত দেশের নাম হবে ‘বাংলাদেশ’। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’ হবে জাতীয় সংগীত।


সেদিনের জনসভার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তত্কালীন ছাত্রলীগ সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘৩ মার্চ পল্টনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জনসভা ছিল : নেতা (বঙ্গবন্ধু) প্রায় পৌনে দুইটার সময় আমাকে ডেকে বললেন, তিনি পল্টনের জনসভায় বক্তৃতা করবেন। নেতা এসেছিলেন বাংলার জনতাকে সুশৃঙ্খল মরণজয়ী সংগ্রামের ডাক দিতে। মন্ত্রমুগ্ধ বাংলা তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল। দুষ্কৃতকারীদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সে সভা ছিল অনির্ধারিত, কিন্তু জনতা ছিল অগণিত। সেদিনের ঘটনা বর্ণনাতীত। সভায় ১ নম্বর ইশতেহার দেওয়া হয়। জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা নির্ধারণ, বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন বাংলার সর্বাধিনায়ক ঘোষণা ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের আলোকে বর্তমান চারটি রাষ্ট্রীয় নীতির কথা সুস্পষ্টভাবে দফাওয়ারী ঘোষণা করা হয়।’


তখন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল গুল হাসান। তার লেখা ‘পাকিস্তান যখন ভাঙলো’ গ্রন্থে তিনি উল্লেখ করেন, ‘শেখ ২ ও ৩ মার্চকে প্রতিবাদ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। পূর্ব পাকিস্তানে এরকম দিবসের কমতি ছিল না। শেখের ঘোষণা ব্যাপক সমর্থন পেল। বিশেষ করে আমলাতন্ত্রের মধ্যে। ওরা এ পর্যন্ত প্রকাশ্যে সরকারকে অমান্য করা থেকে বিরত ছিল, যদিও ওদের সহানুভূতি কোথায় তা বুঝে ওঠা কঠিন ছিল না। এখন ওদের সরকারবিরোধী মনোভাব বৈধতা পেল। ২ মার্চ বেসামরিক কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সহায়তার জন্য সেনাবাহিনী তলব করা হয়।’ এদিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আগামী ১০ মার্চ ঢাকায় নেতৃবৃন্দের সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। রাওয়ালপিন্ডির প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে ঘোষণা করা হয়, এই সম্মেলন অনুষ্ঠানের পর দুই সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার আমন্ত্রণ তাত্ক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। বঙ্গবন্ধু ভুট্টোর উদ্দেশে বলেন, গণতান্ত্রিক নিয়মে প্রণীত এক শাসনতন্ত্র যদি না চান তাহলে আপনাদের শাসনতন্ত্র আপনারা রচনা করেন। বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র আমরাই রচনা করব।


আগের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পতাকা উত্তোলনের পরপরই জানা যায় যে, ফার্মগেটে মিলিটারির গুলিতে ৮/৯ জন শহিদ হয়েছেন। বস্তুত পহেলা মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার পর থেকেই সারাদেশের চেহারা পালটে গেছে। সেনাবাহিনীর লোকেরা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। যত্রতত্র গুলি চালিয়ে মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে তারা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঢাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো এবং সমগ্র বাংলাদেশে প্রথম দিনের জন্য সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। হরতালের সময় শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যায়। হরতাল চলাকালে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত মিছিলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণে ও বিভিন্ন ঘটনায় সারাদেশে শতাধিক ব্যক্তি শহিদ হন।


২ মার্চ গভীর রাত থেকেই স্লোগান, মিছিল, কারফিউ, আর একটু পরপর সাইরেনের বিকট আওয়াজে ঢাকায় বসবাসরত মানুষের মধ্যে ছিল উত্তেজনা। স্টেডিয়াম, নবাবপুর, টয়েনবী সার্কুলার রোড, ভজহরি সাহা স্ট্রিট, গ্রিনত্ রোড, কাঁঠালবাগান, নিউ মার্কেট, ফার্মগেটে গুলিবর্ষণে বহু লোক মারা যান, আহত হন অনেকে। এদিন ঢাকা ছাড়াও রংপুর এবং সিলেটে কারফিউ জারি করা হয়। হাসপাতালে বুলেটে আহতদের জীবনরক্ষার জন্য জনগণের প্রতি ব্লাড ব্যাংকে রক্তদানের উদাত্ত আহ্বান জানান বঙ্গবন্ধু। তিনি জনসাধারণকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘বাংলার স্বাধিকার বিরোধী বিশেষ মহল নিজস্ব এজেন্টদের দিয়ে লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ও উচ্ছৃঙ্খল ঘটনা ঘটাচ্ছে। স্বাধিকার আন্দোলনকে বিপথগামী করার এ অশুভ চক্রান্ত রুখতেই হবে।


সেদিন রাতে বাসায় ফিরে রুমী নতুন এক পতাকার কথা বলছিলেন তার মা জাহানারা ইমামকে। পল্টনের জনসভায় ‘আমার সোনার বাংলা’ গান গাওয়ার পর নতুন পতাকা উত্তোলন করা হয়। রুমী কাগজ ও রঙিন পেনসিল নিয়ে এঁকে এঁকে দেখাতে লাগলেন স্বাধীন বাংলার পতাকা। সবুজের ওপর গোলাকার সূর্যের আদলে টকটকে লাল রং, তার মধ্যে হলুদ রঙে পূর্ব বাংলার মানচিত্র। এভাবেই সারাদেশে রুমীর মতো লক্ষ প্রাণের মাঝে ধীরে ধীরে ফুটে উঠছিল স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র ।

 

আরও পড়ুন
ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত